১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে সারা দিয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য আ’লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর নির্দেশে সাঁথিয়া হাই স্কুলের তৎকালীন শিক্ষক রুস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন ও অন্যরা এলাকার ছাত্র সমাজ ও যুব তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।
২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতাল প্রাঙ্গনে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন রাবি’র ছাত্র নেতা ফজলুল হক, মকবুল হোসেন মকুল, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুসা, আবু হানিফ, মোসলেম উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল ওহাব, সোহরাব, রউফ, মতিনসহ যুব তরুণ’রা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম (চাদু), আব্দুস সামাদ, দারা হোসেন, শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহীদ হন। এলাকার শত শত যুবতী ও মহিলারা সম্ভ্রম হারান। সাঁথিয়ায় পাকসেনারা এলাকায় বহু লোকের ঘর-বাড়ি জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও ব্যাপক লুটপাট চালায়।
৬ ডিসেম্বর সাঁথিয়ার চক নন্দনপুর ও নন্দনপুর মাঠে হানাদার বাহিনী আবার হানা দিলে সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার মুখে হানাদার বাহিনীর ব্যবহৃত জীবগাড়িটি ফেলে রেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সম্মুখ যুদ্ধে উপজেলার একমাত্র মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, গুলি ও তথ্য দিয়ে ব্যাপক সহায়তা করেছিল। তিনি টুকরিতে করে থানা এলাকা থেকে গুলি সরবরাহ করত মুক্তিযোদ্ধাদের। পাক বাহিনীর চোখ এড়াতে ভানুনেছা জীবন বাজি রেখে টুকরির উপরের অংশে গোবর ব্যবহার করতেন।
৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে ভোরে সাঁথিয়ার নন্দনপুর স্বরপ গ্রামে প্রবেশ করার সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ বেধে যায়। দীর্ঘ সময় সম্মুখ যুদ্ধ চলার এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটে চলে যায়।
৮ ডিসেম্বর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পাক হানাদাররা আবার সাঁথিয়া আক্রমনের উদ্দেশ্য আসতে থাকে। সাঁথিয়ার সকল মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে থানা সদর থেকে ৫ কিঃ মিঃ পশ্চিমে জোড়গাছা ও ছেন্দহ ব্রীজ ভেঙ্গে পাক হানাদারদের সাথে চূড়ান্ত মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র বাধার মুখে পাক সেনারা পিছু হটে চলে যায়।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সাঁথিয়া থানাকে শত্রæ মুক্ত ঘোষণা দেন।