১৭ই জুন, ২০২৫ 🔻 ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২🔻 ২০শে জিলহজ, ১৪৪৬

করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা

শেয়ার করুন:

 

বিশ^ব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে কার্যত পুরো বিশ^ই এখন থমকে আছে। বিশে^র প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলেই করোনার থাবা পৌছে গেছে। বাংলাদেশের সব জেলাতেই করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নিত্যদিনের অনেক কাজ এখন বন্ধ। তবে অর্থনীতিকে বাঁচাতে সময়ের সাথে সাথে লক ডাউন অনেক দেশেই শিথিল করা হচ্ছে। তবে তা অত্যন্ত সতর্কভাবে। এখন কেবল নিজেদের রক্ষা করার সময়। এখন চ্যালেঞ্জ হলো করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে নিজেকে এবং বিশ^কে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এখন নিজেদের ঘরবন্দী করে রাখছি। এখন স্কুল কলেজ সব কিছু বন্ধ রয়েছে। মূলত করোনা ভাইরাস যখন থেকে তার ভয়ংকর রুপ দেখাতে শুরু করে তখন থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। আমাদের দেশেও শিশুদের মাঝে যাতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে না পরতে পারে সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে করোনার প্রভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ পিছিয়ে গেছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এসএসসি’র ফল প্রকাশিত হতে পারে। করোনার কারণে বড় সমস্যায় রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত। এটাও নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। চলতি বছরেই রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরীক্ষা এবং জেএসসি পরীক্ষা। তাছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা এবং শ্রেণি পাঠদান স্থগিত। সবকিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। সারা বিশে^ই শিক্ষার্থীরা ঘরে সময় কাটাচ্ছে। যে সময়টা আপনার আমার সন্তান স্কুলে হেসেখেলে পার করতো সেই সময়টাই এখন তারা পার করছে বাড়িতে বসে। নিজেদের কথার পাশাপাশি এই সময়টা তারা কিভাবে পার করছে, তাদের ভেতর আতংক আছে কি না তার খোঁজ রাখতে হবে।  তবে তাদের সময়ের ব্যবধানে লেখাপড়াই একটি বাধা তৈরি হয়েছে। এই বাধা কবে সরে যাবে তাও একেবারে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আবার স্কুল বন্ধ মনে করে একেবারে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। কতৃপক্ষের উদ্যোগে তাই এটুআই এর সহযোগীতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) টেলিভিশনে ক্লাস চালু করেছে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে পিছিয়ে না পরে, বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে যেন লেখাপড়া থেকে দূরে না সরে যায় সেজন্যই আমার ঘরে আমার স্কুল নামের এই ব্যবস্থা। সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত এই ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তা আবার পুনঃপ্রচারও করা হচ্ছে। এসবই হচ্ছে ছাত্রছাত্রীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে। নিঃসন্দেহে কতৃপক্ষের এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। এই আইডিয়াটা অভূতপূর্ব! তবে সার্বিকভাবে সম্পর্ণ নতুন। এটা কতটুকু ইতিবাচকভাবে সার্বিকভাবে ছাত্রছাত্রীরা গ্রহণ করতে পারে তার ওপর নির্ভর করছে এর সফলতা।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে এভাবে ক্লাস করানোর এই ধারণা ছাত্রছাত্রীর করোনা কালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই করা হয়েছে। তবে আমাদের দেশে এই পদ্ধতি চমকপ্রদ। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর সফলতা নিয়ে? অর্থ্যাৎ এতে ছাত্রছাত্রীরা প্রকৃতপক্ষে কতটা উপকৃত হচ্ছে? আর যারা উপকৃত হচ্ছে সেই হার কত? আমাদের লক্ষ রাখতে হবে টেলিভিশনে ক্লাস নেয়ার বিষয়টা সেই শহর থেকে গ্রাম সব স্তরের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যেই নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কতজন শিক্ষার্থী প্রকৃতপক্ষে এই ক্লাস মনোযোগ সহকারে টেলিভিশনের পর্দায় দেখছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে। আমাদের এই পরিকল্পনা স্বার্থক করে তুলতে হবে। কারণ কতদিনে শিক্ষা কার্যক্রম আগের অবস্থায় ফিরবে তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত এই ব্যবস্থা শ্রেণি পাঠদানের বিকল্প হিসেবে উপযুক্ত করে তোলার প্রয়াস করতেই হবে। এই কার্যক্রমের সফলতার জন্য কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা আলোচনার দাবী রাখে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে শহর ও গ্রামের অভিভাবক সচেতনতা। শহরের অভিভাবকরা সচেতন হলেও গ্রামে সেই হার কম। তাদের আর্থিক অবস্থা, পারিপাশি^ক সমাজ ব্যবস্থা এজন্য দায়ী থাকে। ফলে শহরের ছাত্রছাত্রীরা টেলিভিশনে ক্লাস করার সুযোগ গ্রহণ করলেও গ্রাম পর্যায়ে কতজন শিক্ষার্থী এ সুযোগ নিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয়ত. আমাদের দেশে চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে শিক্ষক সামনে থেকে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেখানে তাকে শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে নানা রকম প্রচেষ্টা করতে হয়।  
তবে এখানে একটি বিষয় যে, সেই সংখ্যা যাই হোক না কেন সেটাও কিন্তু আমাদের বেশ কাজে দেবে। বিশেষত যখন করোনার প্রভাবে সবকিছু বন্ধ। তখন বিকল্প হিসেবে দক্ষ শিক্ষকদের দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার একটি মহৎ প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব রয়েছে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের। অন্তত এই দুইজনের সংশ্লিষ্টতা এখানে একান্ত প্রয়োজন। বছরের অন্যান্য সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় সময় থাকে লেখাপড়া করে দিনের সময় পার করা। কিন্তু ঘরে বসে থেকে সবসময় সেই কাজটিও করে যাওয়া সম্ভব হবে না। লেখাপড়া একটানা কার ভালো লাগে! তবে পড়তে তো হবেই। একটি সুন্দর পড়ার রুটিন তৈরি করে সেখানে আপনার সন্তানকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করাতে পারেন  
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন প্রাইভেট বা কোচিং ও শীট নির্ভর লেখাপড়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এতে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হবে। তাছাড়া এখানে যে সমস্যা বেশি তা হলো প্রশ্ন করার সুযোগ না থাকা। কারণ এখানে কেউ উত্তর দেবে না। এখানে কেউ শীট দেবে না। প্রত্যক্ষ মূল্যায়ণও কেউ করবে না। তবে যদি কেউ চেষ্টা করে সে অবশ্যই তা করতে পারবে। প্রতিদিন যে ক্লাসগুলো হচ্ছে তা ভালোভাবে আয়ত্ত¡ করার চেষ্টা করতে হবে। হোমওয়ার্কগুলো প্রতিদিন করতে হবে এবং মিলিয়ে নিতে হবে। এখানে অভিভাবকের বড় ভূমিকা রয়েছে। রয়েছে শিক্ষকের ভূমিকা। প্রতিদিনের কাজ তারিখ অনুযায়ী লিখে রাখতে হবে। সরকারের এটি মহৎ একটি উদ্যোগ। হতে পারে এটি চিরাচরিত প্রক্রিয়ার মতো নয়। তবে এই সময় এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। যেখানে সবাইকে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজার রেখে চলতে হচ্ছে। সেখানে এই পদ্ধতিতে লেখাপড়া শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখতে পারবে। করোনায় সারা বিশে^ই ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা প্রায় একই রকম। তাদের এই ভাইরাস থেকে দূরে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে এটি শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে অন্যান্য বিষয়ের মতোই প্রভাব ফেলবে। মূল প্রভাবই হবে সময়ের হেরফের। সময়মতো এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়া অর্থ উচ্চ শিক্ষায় প্রভাব পরা। আবার এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সময় যখন থমকে দাড়িয়েছে তখন আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
অলোক আচার্য
শিক্ষক ও কলাম লেখক            
ঊসধরষ-ংড়ঢ়হরষ.ৎড়ু@মসধরষ.পড়স