ভাঙনের মুখে শত শত ঘরবাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
“রাতে শব্দ হলেই মনে হয়, নদী এসে পড়ল! মানুষ কি আর এত ভয় নিয়ে বাঁচে?”—চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার নেওলাইপাড়া গ্রামের মুদি দোকানি মঈনউদ্দিন। যমুনা নদী ভাঙতে ভাঙতে এতটাই কাছে চলে এসেছে, যে এখন মাত্র দুই-তিন দিনের মধ্যেই দোকানসহ তার বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
মাত্র সাত-আট মাস আগেও যমুনা ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এখন তা এসে ঠেকেছে বাড়ির একদম পাশে। স্থানীয়দের ভাষায়, “নদী যেন গিলে খেতে এসেছে আমাদের সবকিছু।”
নেওলাইপাড়া, মরিচাপাড়া ও নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের শত শত বাড়ি ও স্থাপনা ভাঙনের মুখে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে অন্তত ৫০০ বিঘা কৃষিজমি। সংকটময় অবস্থায় রয়েছে শতবর্ষী কবরস্থান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বর্ষা আসতে এখনও দেড়-দুই মাস বাকি থাকলেও গত এক মাস ধরে যমুনার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে নেওলাইপাড়া গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত দুই সপ্তাহ ধরে জরুরি ভিত্তিতে জিও-ব্যাগ ফেলতে শুরু করলেও কাজের গতি নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, “কাজ চলছে দায়সারা ভঙ্গিতে, দুই-একদিন কাজ করে আবার বিরতি দেওয়া হচ্ছে।” এর ফলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আরও জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
নেওলাইপাড়ার বাবু সরদার বলেন, “কয়েকদিন আগে আমার দুই বিঘা জমি নদীতে গেছে। এখন বাড়িঘর নদীতে যাওয়ার উপক্রম হইছে। বাড়িঘর গাঙে গেলি কই যামু?”
মরিচাপাড়ার আজিমউদ্দিন, ইদ্রিস আলী, ও ইশতিয়াক হোসেন জানান, “সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিলে এত জমি হারাতে হতো না। আমাদের শত শত আবেদন, মানববন্ধনের পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন,
“নেওলাইপাড়া এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা দুই সপ্তাহ আগে থেকে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেছি। শুরুতে কিছু কারিগরি ও ঠিকাদার-সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। আশা করছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং ভাঙন পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হবে।”