আমাদের শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, ফুটপাতে কিংবা রেলস্টেশনের কোণে যেসব শিশুরা দিন কাটায়, তাদের অনেকেরই নেই জন্মের কোনও প্রমাণ। রাষ্ট্রের খাতায় এদের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এক জরিপ বলছে, পথশিশুদের ৫৮ শতাংশেরই নেই জন্মসনদ! ভাবা যায়? একজন মানুষ জন্মেও যদি ‘অদৃশ্য’ থাকে, তবে তার জীবনে স্বপ্নের জায়গা কোথায়?
এই শিশুরা স্কুলে যেতে চায়, কিন্তু জন্মসনদ না থাকায় তাদের ভর্তি নেয় না স্কুল। তারা হাসপাতালে যায়, কিন্তু পরিচয় না থাকায় সেবা পায় না। পাসপোর্ট কিংবা ভোটার আইডির কথা তো কল্পনাও করতে পারে না। এমনকি সরকারি কোনো ভাতাও তাদের ভাগ্যে জোটে না। যেন তারা শুধু রাস্তার ‘শিশু’, রাষ্ট্রের নয়।
বারো বছরের শাহিনের কথা শুনলে মন কাঁদবে। বলল, “আমার নাম আছে, কিন্তু কাগজে নাই।” কাগজ ছাড়া কোনো অধিকারই যেন মেলে না। সমাজের চোখে তারা দোষী, পুলিশের চোখে সন্দেহভাজন, আর রাষ্ট্রের চোখে অজানা কেউ। অথচ তারা তো আমাদেরই মতো রক্ত-মাংসের মানুষ, স্বপ্ন দেখতে চায়, বাঁচতে চায় সম্মানের সঙ্গে।
এইসব শিশুরা বড় হচ্ছে কোনো ঠিকানা ছাড়া। অথচ জন্মসনদ থাকলে তারা পেত শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, এমনকি একটা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন। রাষ্ট্র যদি এদের দিকে হাত বাড়ায়, তবে তারাও হয়ে উঠতে পারে একজন ডাক্তার, শিক্ষক বা শিল্পী। সমাজে গর্ব করে বলতে পারত, “আমি বাংলাদেশি।”
এখন সময় এসেছে চিন্তা বদলানোর। প্রয়োজন, অস্থায়ী ঠিকানা ভিত্তিক জন্মনিবন্ধন চালু করা। প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিওদের সমন্বয় করে সহজ পদ্ধতিতে জন্মসনদ প্রদান। জন্মের প্রমাণ যে শুধু একটা কাগজ নয়, সেটাই বোঝাতে হবে আমাদের।