অলোক আচার্য্যঃ
শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যা প্রতিনিয়ত মানবতা ও মনুষ্যত্বের উন্মেষ ঘটিয়ে চলেছে। সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই কাজটি এক শ্রেণির মানুষ করে আসছে। শিক্ষা দানের প্রতিটি স্তরে যারা এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে তাদের সবার দায়িত্বই এক। কিন্তু সব শিক্ষকের জীবন যাপন কি একই সরলরেখায় প্রবাহিত হয়? বহু প্রতিকুলতায়ও শিক্ষকদের শিক্ষাদানের এই প্রচেষ্টা বন্ধ হয়নি। কম পারিশ্রমিক, প্রতিকুল পরিবেশ কোনো কিছুই শিক্ষকদের দমাতে পারেনি। শিক্ষকরা আছে জন্যই সমাজ সুস্থতার আলো দেখেছে। যুগ যুগ ধরেই শিক্ষকরা এটাই করে আসছে। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা দানে যারা নিয়োজিত আছেন তারা সবাই শিক্ষক। দেশে লাখ লাখ শিক্ষক নিরলস প্রচেষ্টায় এই মহান কাজটি করে যাচ্ছে। এত এত গুণের সমাবেশ ঘটাতে হয় যে একজন অতিমানবেরও বুঝি এত ক্ষমতা থাকে না। সেজন্য শিক্ষকতাকে পেশা না বলে সেবা বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের অবস্থা দেশে খুব একটা সুবিধার নয়। একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান অšে¦ষণনে তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কি শেখাবেন। তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিক্ষকতার জীবনের সব থেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কি না তা বুঝতে পারাও একটি বড় দক্ষতার ব্যাপার।
দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত শিক্ষক যেমন আছে পাশাপাশি আছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত শিক্ষক। সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষকের পাশাপাশি দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা প্রচুর । আবার নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনের উৎসও প্রাতিষ্ঠানিক। সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক না কেন প্রতিটি শিক্ষকের দায়িত্বই একজন শিক্ষার্থীকে মানুষ করে গড়ে তোলা। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যই এক ও অভিন্œ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আয়ের মূল উৎস হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন, প্রাইভেট বা কোচিং ইত্যাদি। প্রাইভেটের ওপর নির্ভর জীবন যে কতটা দুর্বিষহ তা কেবল ভুক্তভোগী শিক্ষকরাই জানেন। কারণ প্রতিষ্ঠান থেকে যে বেতন দেয় তা প্রায়ই যৎসামান্য। শহর ও মফস্বল অঞ্চলভেদে এই বেতনের হার কম বেশি হয়ে থাকে। তবে যাই হোক বেসরকারি শিক্ষকরা করোনা কালে ব্যাপক অর্থ কষ্টে আছেন। অনেকেই প্রাইভেট বা কোচিং করাতে না পেওে অন্য কর্মে আত্মনিয়োগ করেছে শুধু বেঁচে থাকার জন্য। যা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে লজ্জায় ফেলতে হয়েছে। অনেক শিক্ষক তাদের পেশা হারিয়ে দিন মজুরের কাজ ধরতে বাধ্য হয়েছে। অনেক শিক্ষককে অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।