১৫ই জুন, ২০২৫ 🔻 ১লা আষাঢ়, ১৪৩২🔻 ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬

মসজিদে বিভিন্ন অপরাধের ধর্মীয় ও আইনি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বক্তব্য রাখলেন সুজানগর থানার নবাগত ওসি

শেয়ার করুন:

 এম এ আলিম রিপনঃ ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা। জুমার খুতবা পূর্ববর্তী বয়ান শেষে সুজানগর বাজার কেন্দ্রীয়  জামে মসজিদে তখন পিনপতন নীরবতা। তিন তলার মসজিদটির ভেতরে উপস্থিত শত শত মুসল্লি। এমন সময় পাঞ্জাবি পরিহিত আরেক লোক দাঁড়ালেন মাইক হাতে। নিজেকে  সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিয়ে শুরু করেন কথা বলা। মাদক,  জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং,কিশোর গ্যাংসহ সমসাময়িক বিভিন্ন অপরাধের আই ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন বক্তৃতায়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মুসল্লিদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলেন। নিজের নম্বর মুসল্লিদের দিয়ে আহ্বান করেন অপরাধীর তথ্য প্রদানের জন্য। শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারী) সরেজমিনে মসজিদটিতে জুমার নামাজে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। প্রায় ১৫ মিনিটের বক্তব্যে সুজানগর থানার নবাগত ওসি আব্দুল হাননান বলেন, আমি আপনাদের সবচেয়ে আস্থার জায়গা মসজিদে দাঁড়িয়ে বলছি, এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আপনাদের সঙ্গে কাজ করবো ইনশআল্লাহ। আপনারা শুধু আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। বাকি বিষয়গুলো আমরা পুলিশ দেখব। সম্ভাব্য তথ্য থাকলে আমাদেরকে দেবেন। এক্ষেত্রে আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে। আমি আপনাদের সবচেয়ে আস্থার মানুষ হতে চাই।তিনি আরও বলেন, মসজিদে কথা বলার কারণ হচ্ছে, এখানে কথা বললে সবাই শোনেন। এখানে সমাজের বিভিন্ন ধরনের মানুষ উপস্থিত আছেন। অনেক জায়গায় দেখেছি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি সেজে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ ব্যবসা কিংবা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এ নিধরনের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করছি। এ রকম ব্যক্তি এখানে থাকলে সতর্ক হয়ে যেতে পারেন। ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে মুরব্বিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখানে যারা বাবা আছেন, তারা নিজেদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে একটু খেয়াল রাখবেন। আপনাদের অজান্তে ছেলেরা অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একবার যদি বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, পরে তারা সেখান থেকে বের হতে পারে না। মসজিদ কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি চাই এই মসজিদ কমিটি এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে  এই এলাকা অপরাধমুক্ত ও মাদকমুক্ত করতে চাই । আপনারা যেকোনো বিষয়ে আমার থানায় গিয়ে যোগাযোগ করবেন। আমার দরজা সব সময় উন্মুক্ত। এ সময় উপস্থিত সবাইকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক করেন। নামাজ শেষে এ বিষয়ে জানতে চাইলে  সুজানগর থানার নবাগত ওসি আব্দুল হাননান বলেন, একটি মসজিদে যাওয়ার পর ওই মসজিদের অনেকেই ওসিকে আস্থার মধ্যে নেন। তারপর তারা বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেন। মুসল্লিদের কাছ থেকে তথ্য পেলে আমি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো বলে আশাকরি। এছাড়াও মসজিদে কথা বলার মধ্যে দিয়ে নানামুখী পুলিশি সেবা সম্পর্কে প্রচার করতে পারি। আবার বিভিন্ন মানুষ আইনি বিষয় জেনে সচেতন হতে পারেন বলেও জানান তিনি। মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ওসি স্যার আমাদের মসজিদে বিভিন্ন অপরাধের বিষয়গুলো ধর্মীয় ও আইনি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। এটি চমৎকার বিষয়। আমি মনে করি- এর মাধ্যমে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। সুজানগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ দুলাল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ আব্দুস সামাদ মাস্টার বলেন, এটি পুলিশের চমৎকার একটি উদ্যোগ। সুজানগর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী জানান,  থানার নবাগত  ওসি  মসজিদে এসে কথা বলার কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা সতর্ক হবার পাশাপাশি জঙ্গিবাদমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত,মাদকমুক্ত ও ইভটিজিং মুক্ত সুজানগর হবে বলে প্রত্যাশা রাখি। এ বিষয়ে পাবনা সহকারী পুলিশ সুপার(সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, মসজিদ একটি ধর্মীয় ও সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এখানে বিভিন্ন পুলিশি সেবা ও আইনি সেবা প্রচার ভালো দিক বলে আমি মনে করি।  এ সময় তিনি আরো বলেন, পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, বিপিএম স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি শুক্রবার বিট অফিসারগণ তাঁর  বিট এলাকার মসজিদে অবস্থান করে থাকেন।  এর মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী ও মানুষের  দোরগোড়ায় পুলিশি  সেবা পৌঁছে  দেবার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরাও বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।