শাহজাদপুর প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়াম ভাংচুরের ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসলেও অন্ধকারে পড়ে গেছে নির্যাতনের শিকার দর্শনার্থীর আর্তনাদ। রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ানসহ স্টাফদের দ্বারা ব্যাপক মারধর এবং অফিস কক্ষে আটকে রেখে ব্যাপক মারধরের শিকার প্রবাসী দর্শনার্থী শাহনেওয়াজ কারও কোন সহযোগীতা পাচ্ছেন না বলে বাঁচার আকুতি জানিয়েছে পরিবার। বিক্ষুব্ধ জনতার দ্বারা অডিটোরিয়াম ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশাসন সরব হলেও নির্যাতনের শিকার পরিবার কোথাও বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তভোগী পরিবার।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত দর্শনার্থী শাহনেওয়াজ সোহানের বোন সোহেলী আক্তার বলেন, গত ৮ জুন শাহনেওয়াজ তার স্ত্রী ও ভাতিজাকে নিয়ে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ঘুরতে যায়। প্রবেশের টিকিট নিয়ে ভিতরে ঢুকে পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শাহনেওয়াজ বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও কাছারিবাড়ির কান্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানসহ পুরো স্টাফ গেট থেকে মারধর করতে করতে অডিটোরিয়ামের ভেতরে আটকে রেখে বাঠাম দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। অফিসের মধ্যে আটকে রেখে ২ ঘন্টা ধরে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। একপর্যা শাহনেওয়াজ কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানের পা ধরে জীবন ভিক্ষা চাইলেও নিষ্ঠুরতা কমাতে পারেনি তাদের। একজন স্টাফ মাথার পাগরি খুলে কাঠের বাঠাম দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। শাহনেওয়াজকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এটা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং পরিবারের লোকজন গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় শাহনেওয়াজকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঐদিন রাতেই শাহনেওয়াজ কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে শাহজাদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও সেই অভিযোগ এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
ভূক্তভোগী শানেওয়াজের বোন আরও বলেন, মারধরের ঘটনায় অভিযোগের বিষয়ে থানা পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত মঙ্গলবার (১০ জুন) স্থানীয়রা শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করে অডিটোরিয়ামের দরজা ও জানালা ভাংচুর করে। ভাংচুরের ঘটনায় রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ান গত ১০ জুন নির্যাতিত শাহনেওয়াজকেই প্রধান আসামী করে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এদিকে শাহনেওয়াজের অভিযোগ রয়ে গেছে অন্ধকারে। অপরদিকে শাহনেওয়াজের স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাদপুর আমলি আদালতে মামলা করতে গেলেও অভিযুক্তরা সরকারি চাকুরীজীবী হওয়ায় মামলা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী শাহনেওয়াজের বোন সোহেলী আক্তার।
তিনি কাছারিবাড়ি অডিটোরিয়ামে ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাধারন মানুষ বলে কোথাও বিচার পাচ্ছেন না তারা। নির্যাতনের শিকার শাহনেওয়াজের শরীরের ক্ষত না শুকালেও এখন কেবল বাঁচতে চায় পরিবার। দেশের সাধারন নাগরিক হিসেবে কোনরকম ঝামেলাহীন স্বাভাকি জীবন চান তারা।
এদিকে কাছারিবাড়িতে অডিটোরিয়াম ভাঙচুরের ঘটনায় কাস্টোডিয়ানের করা মামলায় এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস অধ্যাপক আবু শামিমসহ মোট ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছলাম আলী জানান, কাছারিবাড়িতে ঘটা দুটো ঘটনারই তদন্ত চলমান রয়েছে।