লন্ডনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠককে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বৈঠকের পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে মত পাল্টানো এবং বিএনপির নতুন কৌশলকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক আলোচনা ও নানা বিশ্লেষণ।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া: “নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঐক্য জরুরি”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,
“একটি বিষয়ে (করিডর ইস্যু) আমরা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছি। এটাকে রাজনীতির স্বাভাবিক চর্চা হিসেবে দেখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“জাতির ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠন করতে হবে। অতীত ভুলভ্রান্তি নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা এগোতে পারব না।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, লন্ডন বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন,
“ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অধ্যাপক ইউনূসের অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কাজে লাগানো হবে।”
অধ্যাপক ইউনূস: “রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই”
১১ জুন চ্যাথাম হাউসে আয়োজিত আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে জানান,
“আমার বা উপদেষ্টা পরিষদের কারো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। আমাদের কাজ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর।”
তিনি গণভোটের ধারণাও নাকচ করে দেন।
📣 অন্য দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: “বিএনপিকেই তুলে ধরা হয়েছে প্রধান শক্তি হিসেবে”
জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল মনে করে, লন্ডন বৈঠক ও যৌথ ঘোষণায় বিএনপিকেই মূল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে তারা প্রশাসনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে।
এ প্রসঙ্গে জামায়াত এক বিবৃতিতে বলেছে,
“প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।”
তবে আমীর খসরু এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন,
“বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আমাদের তুলনা চলে না। নির্বাচনের সময় নির্ধারণে সবাই একমত, এমনকি জামায়াতও।”
বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা মনে করছে, লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, এখন বিএনপির পূর্ণ মনোযোগ নির্বাচনের দিকেই, এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।