২০শে জুলাই, ২০২৫ 🔻 ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২🔻 ২৪শে মহর্‌রম, ১৪৪৭

লুটপাট নয়, এখন রক্ষার সময়— সমুদ্র রক্ষায় জোরালো বার্তা জাতিসংঘ মহাসচিবের

শেয়ার করুন:

ফ্রান্সের নিস শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ‘ওশান সামিট ২০২৫’। বিশ্বের সমুদ্র সম্পদকে লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গুতেরেস বলেন, “আমরা এখন এমন এক যুগে আছি যেখানে সংকট বিরাজমান, কিন্তু এখানকার মানুষের দৃঢ়তা আমাকে আশাবাদী করে তোলে। আশা করি, আমরা এখন লুটপাট থেকে সরে এসে রক্ষার পথে হাঁটতে পারবো।”

সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০ শতাংশ মহাসাগর রক্ষায় প্রতিটি দেশেরই জোরালো অঙ্গীকার প্রয়োজন। তিনি প্লাস্টিক দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরার অবাধ বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় দুর্বল শাসনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলায় বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভূমিকাকে ইঙ্গিত করে বলেন, “গভীর সমুদ্র যেন ওয়াইল্ড ওয়েস্টে পরিণত না হয়।”

সম্মেলনে ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলেই সহ বিভিন্ন ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার বক্তব্যে বলেন, “পৃথিবী যখন জ্বলছে, সমুদ্র তখন ফুটছে।” তিনি গভীর সমুদ্র খননের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেন, “এটা এক ধরনের উন্মাদনা। সমুদ্রের তলদেশে এমন হস্তক্ষেপ করা মানে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা।” তিনি আন্তর্জাতিকভাবে গভীর সমুদ্র খননের উপর বিরতি ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত ‘হাই সিস ট্রিটি’ কার্যকর করতে অন্তত ৬০টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত ৪৯টি দেশ তাদের অনুসমর্থন দিয়েছে, এবং আরও ১১টি দেশ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই চুক্তি কার্যকর হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সমুদ্রের ৩০ শতাংশকে রক্ষা করার যে লক্ষ্যমাত্রা (৩০x৩০) নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনের পথ সুগম হবে।

তবে ফ্রান্সের নিজস্ব “সংরক্ষিত” জলসীমায় এখনো সম্পূর্ণভাবে ‘bottom trawling’ নিষিদ্ধ না করায় দেশটি কিছু সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা তাদের জলসীমার ৪ শতাংশ অংশে এই প্রক্রিয়া সীমিত করবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, তারা তাদের সংরক্ষিত এলাকার অর্ধেক অংশে bottom trawling সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করবে।

বর্তমানে পৃথিবীর মোট সমুদ্র এলাকার মাত্র ২.৭ শতাংশ অংশ কার্যকরভাবে সংরক্ষিত। এ অবস্থায় এবারের সম্মেলনকে সমুদ্র সংরক্ষণ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস ও অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য বিশ্বব্যাপী সমুদ্র রক্ষায় একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে।