উজ্জ্বল হোসেন, সাঁথিয়া- পাবনায় সাঁথিয়া চলতি বছর পেঁয়াজ ঘরে তুলতে শুরু করে দিয়েছে কৃষকরা। বর্তমান বাজার দাম কম থাকায় লোকসানের আশংকায় ভুগছে কৃষক। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজের চাহিদা পুরণে সক্ষম হলেও দাম কম থাকায় ভালো নেই পাবনার পেঁয়াজ চাষীরা। উৎপাদন ভালো হওয়ায় চোখে মুখে খুশির ঝলক।
পাবনার সাঁথিয়া কৃষি অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষমাত্রার চেয়ে চলতি বছর এ উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন ৭৫০ হেক্টর বেশি হয়েছে।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিল ও মাঠে ব্যাপক পেঁয়াজের আবাদ করে কৃষকরা। উপযোগী আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় কৃষকদের পেঁয়াজর ভালো উৎপাদন হয়েছে। ইতো মধ্যে কৃষকরা তীব্র গরম উপেক্ষা করে শ্রমিক নিয়ে মাঠে উপস্থিত হচ্ছে ভোর থেকে পেঁয়াজ তুলতে। শ্রমিক ও পরিবারের মহিলা, শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও পেঁয়াজ মৌসুমে বসে নেই। মহিলারা ভোর রাত থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রমিকদের খাবার রান্নার কাজে ও পেঁয়াজের মাথা কাটার কাজে। পরিবারের ছোট সন্তানটিও যেন বসে নেই বাবার কাজের সাথে সেও যেন একজন পেশাদার কৃষক। মহিলারা রাত গভীর পর্যন্ত পেঁয়াজের অগ্রভাগ কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
অক্টোবরে সাঁথিয়ার কৃষকরা পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করে থাকে। জমিতে জলাবদ্ধতা থাকায় তারা কাঁদা মাটির উপর ছাই ব্যবহার করে বীজতলা করেন। ডিসেম্বরের মাঝা মাঝি সময়ে তারা পেঁয়াজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করেন।
উপজেলা সাতানির চর গ্রামের রওশন মন্ডল জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে পেঁয়াজ রোপন করতে পেঁয়াজের বীজ ৩হাজার, জমি চাষ-২হাজার ,সার-৩হাজার,কিটনাশক ৩হাজার, জমিতে চারা লাগানো-৫হাজার,সেচ-১২শত, জমি থেকে আগাছা ও গোড়া আলগা করা বাবদ-৫হাজার ,জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা বাবদ-৩৫০০টাকা লাগছে। এক বিঘা জমির লীজ বাবদ মালিককে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। প্রায় বিঘায় ৪০/৪২ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সে তুলনায় পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশংকায় ভুগছে তারা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট কাশিনাথপুর সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট ঘুরে দেখা গেছে ,বর্তমানে পেঁয়াজ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে। যা কৃষকের জন্য মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া।
উপজেলার বিষ্ণুবাড়িয়া গ্রামের বাবলু, বাবু জানান, উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কমে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হচ্ছে। যা শ্রমিকদের দিতেই শেষ হচ্ছে। তারা বলেন আমাদেও কষ্টের কথা একটু মিডিয়ায় লেখে সরকারকে অবগত করুন।
গৌরীগ্রামের গ্রামের পেঁয়াজ রোপনকারী কৃষক আজম আলী জানান, এত খরচের পরও পেঁয়াজের বাজার এ বছর কম থাকায় আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার পেঁয়াজের বাজার আমাদের অনুকুলে না রাখলে কৃষকরা এ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।
বোয়াইলমারী গ্রামের আমজাদ ক্ষোপের সাথে জানান, হাটে ৫ মন পেঁয়াজ এনেছিলাম। প্রায় ১ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ৭৫০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি। ১মন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০টাকা। ঋনের টাকা দিতে জায়গা জমি বিক্রি করতে হবে। উপজেলার ধনী শ্রেণির কৃষকরা জমির পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষরণ করছে বেশি দামের আশায়। তবে ক্ষুদ্র,মাঝারি ও দারিদ্র শ্রেণির কৃষকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে হাটে পেঁয়াজ বিক্রয় করতে হচ্ছে। এতে করে তারা কম দাম পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছে।
সাঁথিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, চলতি বছর জমিতে পেঁয়াজের ভালই উৎপাদন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সাধ্যমত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাটের ইজাদাররা বলেন, মৌসুমের সময় দেশের বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় বাজারগুলোতে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম কম।