১৫ই জুন, ২০২৫ 🔻 ১লা আষাঢ়, ১৪৩২🔻 ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬

সরকার পরিবর্তনের পর রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান ইতিবাচক প্রভাব

শেয়ার করুন:

মার্চ ও এপ্রিল মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য অবস্থানে রয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে) আকুর বিল বাবদ ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করার পরও দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। তবে আকুর বিল পরিশোধের পর দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। এই অবস্থান এখনো অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এক বিবৃতিতে বলেন, “আজ আকুর বিল হিসেবে ১ দশমিক ৮৮৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও রিজার্ভে বড় ধরনের কোনো চাপ পড়েনি। এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের অব্যাহত রেমিট্যান্স পাঠানো এবং রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবণতা।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়ে আছে ২৫ বিলিয়নের বেশি। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) নির্ধারিত মানদণ্ড, বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২২ সালের আগস্টে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। তবে এরপর রিজার্ভে বড় ধরনের পতন শুরু হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, ওই সময় সরকারি ছত্রছায়ায় কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থপাচার রিজার্ভ পতনের প্রধান কারণ ছিল। ফলে প্রতি মাসে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমতে থাকে এবং ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষে রিজার্ভ নেমে আসে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে।

তবে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে অর্থপাচার রোধে নেওয়া হয় কঠোর পদক্ষেপ। এর ফলে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ৩৭০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করার পরও রিজার্ভে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়।

বর্তমান রিজার্ভ ধরে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি খাতে উন্নয়ন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, হিমায়িত মাছ, ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই প্রবৃদ্ধি রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, রপ্তানি খাত ও প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও স্থিতিশীল হবে এবং ভবিষ্যতে আমদানি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও বড় কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে না।