পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার সাঁথিয়ায় কথিত এক চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসায় জীবন মরণ সন্ধিক্ষনে গরীব ভ্যান চালক আব্দুল মুন্নাফ। অর্থাভাবে তার চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। ভ্যান চালক আব্দুল মুন্নাফের বাড়ি সাঁথিয়া উপজেলার ছোন্দহ গ্রামে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সাঁথিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার ছোন্দহ গ্রামে গরীব ভ্যান চালক আব্দুল মুন্নাফ বছর তিনেক আগে উপজেলার করমজা গ্রামে আব্দুর রউফ নামে এক হাতুরে কথিত চিকিৎসকের নিকট পাইলস এর চিকিৎসার জন্য যান। তিনি তাকে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা করেন। আব্দুল মুন্নাফের পাইলস ঠিক না হওয়ায় পুনরায় গত ২২ জুলাই কোরবানী ঈদের আগে আবারও ওই ডাক্তারের নিকট যান। তাঁর পরামর্শে আবারও তাকে অপারেশন করানো হয়। অপারেশন সঠিক না হওয়ায় ক্ষত স্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এতে আব্দুল মুন্নাফ দুর্বল হয়ে পড়লে হাতুরে ওই চিকিৎসককে জানালে তিনি তাদেরকে রক্ত বন্ধ করার জন্য ট্রাক্সিল ৫০০এমজি ট্যাবলেট দুই ঘন্টা পর পর ২টা করে খাওয়াতে বলেন। এতে আরও দুর্বল হয়ে পড়লে মুমুর্ষ অবস্থায় মুন্নাফের স্বজনেরা তাকে গত মঙ্গলবারে এনায়েতপুর মেডিক্যালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ১০/১২টি টেস্ট করানো হয়। বেশীরভাগ রিপোর্টই ভাল নয়। ওখানকার চিকিৎসক জানান মুন্নাফের পায়খানা রাস্তায় পচন ধরে গেছে এবং কিডনি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ দিকে অর্থাভাবে এনায়েতপুর মেডিক্যালে ভর্তি করতে না পেরে এখন বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আব্দুল মুন্নাফ।
ভুক্তভোগী আব্দুল মুন্নাফ জানান, প্রথমে আমি ওনার নিকট ২/৩ বছর চিকিৎসা করাই। রোগ নির্মূল না হয়ে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। ঈদের আগে তার নিকট দেখাতে গেলে ওই চিকিৎসক আমার পায়খানার রাস্তায় মেশিন দিয়ে অনেকক্ষণ কি যে করলো এতে আমি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে চিৎকার করি। পরে আমাকে একটা ইনজেকশন দেয় ব্যথা কমানোর। এতেও দমন না হওয়ায় বাড়ি চলে আসি। তারপর বাড়িতে এসে পায়খানায় গেলে প্রচন্ড রক্তক্ষণ শুরু হয়। কেজি কেজি রক্ত পড়া শুরু হলে আমি চরম অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসককে জানালে তিনি বলেন যে ঔষধ খান ঠিক হয়ে যাবে। মুন্নাফ বলেন, ওই ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আজ আমার এই অবস্থা।
এ দিকে আব্দুল মুন্নাফের পুত্রবধু শামিমা খাতুন জানান,পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি আজ অসহায় হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তার দুটি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের অসুস্থ তেমন কর্ম করতে পারে না। ছোট ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে। সে একাদশে ভর্তি হবে। সেই টাকা রোজগার করতে সে এখন বাবার ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। একদিকে বাবার চিকিৎসা অন্যদিকে নিজের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক আব্দুর রউফ জানান, আব্দুল মুন্নাফ বেশ কয়েক বছর আগেও চিকিৎসা নিয়েছে তখন তিনি ভাল হয়েছিল। ঈদের আগে তিনি রক্তক্ষরণ অবস্থায় আমার কাছে এসেছিল আমি তাকে কোন অপারেশন করি নাই। আমি ক্ষতস্থান চেক করে শুধু ইনজেকশান দিয়েছি এবং ঔষধ খেতে বলেছি পরে জানতে পেরেছি তিনি এনায়েতপুর গিয়েছে।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,কোন এমবিবিএস ডাক্তার ও সার্জিক্যাল অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন রোগীকে অপারেশন করার নিয়ম নেই। আমরা ভূক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল রায়হান জানান, রোগী ও হাতুরে চিকিৎসকের ব্যাপারে শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।