ইছামতিনিউজটুয়েন্টিফোর.কম রিপোর্টঃ চারি দিকে থৈই থৈই পানি। পানি সাথে মিতালি করছে বাতাস। হাঁসের দল মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে নিরিবিলি শান্ত পানিতে। ক্লান্ত হলেই যেন ইট সিমেন্টের ভবনে বিশ্রাম নিচ্ছে হাঁসের দল। নৌকায় উঠে চলাচল করছে সৌখিন কিছু শিক্ষক। এ যেন কোন ঝিল বা বিলে ভ্রমণে গেছেন তারা। সেখানে যেন মনের আনন্দে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু না মনের আনন্দে না বাধ্য হয়ে কষ্ট ও দুর্ভোগের মধ্যে চলা চল করছে ১০ জন শিক্ষক। হে আমরা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্ণনা করছিলাম। বিদ্যালয়টির নাম চরদুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চরদুলাই গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বর্ষার সময় প্রতি দিন নৌকায়
শিক্ষকদের অফিসের কাজ করার জন্য বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। দুর থেকে দেখলে অনেকেই মনে করবে ছায়া ঘেরা স্থানটি হয়তো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু বন্যা নয় এটি বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার কারনে ডুবে আছে পানিতে। বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ না থাকলে শিশুদের জন্য পাঠ গ্রহনে কত টা ঝুকিপূর্ণ হতে পারত। এ চিত্র গত ৪ বছরের। যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জলবদ্ধতার কারণে লেখাপড়া বিঘ্ন ঘটছে বহু দিন ধরে। এতে অনেক শিশু বিদ্যালয় আসা থেকে বিরত থাকে। বঞ্চিত হয় লেখা পড়া থেকে। মাঠের ভেতর দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র পথ হওয়াতে সমস্যায় পরতে হচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ দুর্ভোগ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তারা আরও জানান বিদ্যালয়ের সামনে একটি ব্রিজ স্থাপন করা হয় পানি নিস্কাশনের জন্য। ব্রিজটির একপাশ মাটি দ্বারা ভরাট করায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ করোনাকালীন যদিও স্কুল বন্ধ ছিল তারপরেও শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে স্কুলের পাশের বাড়িতে অফিস করছে। কিন্তু সরকার স্কুল খুলে দিলে কিভাবে সাড়ে তিনশত শিক্ষার্থীর ক্লাস গ্রহণ করবে এ প্রশ্ন অভিভাবকদের।
যে বিদ্যালয়টির মাঠ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হতো, তা এখন মৎস্যচাষের জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। নেই খেলার শিশুরা রয়েছে রাশি রাশি পানি, মাছ আর হাঁসের দল।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিধান চন্দ্র ঘোষ বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে আসলে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয় তাকে। বাধ্য হয়ে নৌকার সাহায্যে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন তিনি। তিনি বলেন, পানি উপেক্ষা করে শিক্ষিকাদের বিদ্যালয়ে আসা দুঃসাধ্য। বাধ্য হয়ে পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে শিক্ষকদের অফিস করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রেহানা ইয়াসমিন জানান, আমাদের বিদ্যালয় বর্তমানে মোট ৩৮৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং ১০ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছে এর মধ্যে ৯ জনই শিক্ষিকা মাত্র একজন শিক্ষক। বছরের দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকায় মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় পৌঁছানো খুবই কষ্টদায়ক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারি শিক্ষক চঞ্চল কুমার জানান, আমরা দুর্ভোগ ও কষ্টের মধ্যে বসবাস করছি। এরূপ দীর্ঘদিনের সমস্যার কারণে বিদ্যালয়ের পাশে একটি অস্থায়ী ঘর তুলে বিদ্যালয়ের অফিশিয়াল কার্যক্রম চলছে। বিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রমের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও অভিভাবকরা।