৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ১৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

সৌদি থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যে কারণে

সৌদি থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যে কারণে

শেয়ার করুন:

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। গত আগস্ট মাসে সৌদি থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। তৃতীয় অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। যার পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ওমান, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর। কী কারণে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তা খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, আমাদের মোট প্রবাসী শ্রমিকের প্রায় ৩৬ শতাংশই থাকে সৌদি আরবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া শুরু করে। সেই থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ৫৮ লাখ শ্রমিক সৌদি গিয়েছে, যা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া মোট অভিবাসীর ৩৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে বহু অভিবাসী সৌদি আরব থেকে ফিরেও এসেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ঠিক কত শ্রমিক অবস্থান করছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, সেখানে বৈধ-অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা ২৬ লাখ বা তারও বেশি। পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, তালিকায় শীর্ষে থাকলেও সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ দিন দিন কমছে আর বাড়ছে মালয়েশিয়া থেকে।

জানা গেছে, দিন যত যাচ্ছে, সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বিদেশগামীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এ দেশটি। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন। গত বছর দেশটিতে গেছেন ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন এবং ২০২৩ সালে গেছেন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ বাংলাদেশি। সৌদি আরব কেন পছন্দ, জানতে চাইলে প্রবাসী শ্রমিক আমির হোসেন বলেন, সৌদি আরব ইসলামের তীর্থভূমি।

যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মুসলমান হজ করতে যান। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। সেটি নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কাজের জন্য যারা সৌদি আরবে থাকেন, তারা অল্প খরচে হজ, ওমরাহ করতে পারেন।

বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। মূলত অর্থ উপার্জন এবং হজ করা—এ উদ্দেশ্য নিয়েই সৌদি আরবে বেশি যান। তা ছাড়া সৌদি আরবের বাজার উন্মুক্ত। এ শ্রমবাজার আমাদের জন্য কখনো বন্ধ হয়নি। তাই শ্রমিকরা বেশি যাচ্ছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই রেমিট্যান্স বেশি আসছে।

চাঁদপুরের আলী হোসেন বলেন, কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই সেখানে গিয়ে কাজ পাওয়া যায়। দক্ষ-অদক্ষ বহু শ্রমিক সৌদি আরবে যাচ্ছেন। তা ছাড়া সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশি আসার কারণ হচ্ছে, দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি থাকেন। একই গ্রামের বা একই জেলার অনেক মানুষ থাকায় কাজ করতে সুবিধা হয়। কোনো পরিবারের বা বংশের একজন যেতে পারলে তিনি যে কোনো কৌশলে তার ভাই, বন্ধু, আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে যান। এতে সৌদি আরবে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে।

আর যেহেতু শ্রমিক বেশি; তাই রেমিট্যান্সও বেশি আসে। কেউ কেউ বলেন, সৌদি আরবের সবাই মুসলমান হওয়ায় বাংলাদেশিরা সেখানে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাতায়াত, ভিসা পাওয়া সহজ হওয়াও সৌদি আরবে বেশি শ্রমিক যাওয়ার অন্যতম কারণ। কাজের সহজলভ্যতা, পূর্বপরিচিতি এবং ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাচ্ছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সৌদির শ্রমবাজারে সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। শ্রমিক বেশি হওয়ায় রেমিট্যান্সও বেশি আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশর জনশক্তি রপ্তানি খাত দালালনির্ভর।

দালালরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে লোক পাঠাতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে প্রবাসীর হার বাড়লেও সৌদি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এর মূল কারণ, সেখানে অনেক প্রবাসী অবৈধ হয়ে পড়ছেন। তাই এ শ্রমবাজারের দিকে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।

এদিকে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে মালয়েশিয়ার স্থান ছিল অষ্টম। গত আগস্ট মাসে সেটার অবস্থান হয়েছে তৃতীয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় নতুন করে ৪ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক গিয়েছে। দেশটিতে বৈধ-অবৈধভাবে ১০ লাখের বেশি শ্রমিক আছে। বর্তমানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ফের খোলার চেষ্টা চলছে। সেখানে আগামী ৬ বছরে ১২ লাখ শ্রমিক যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ শ্রমিকরা যেতে পারলে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া সৌদি আরবের পর একমাত্র মালয়েশিয়াতেই অদক্ষ শ্রমিকদেরও কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সাবেক সভাপতি আলী হায়দার চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি প্রয়োজন। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শুধু সৌদি আরব, মালয়েশিয়া নয়, নতুন নতুন দেশে আমাদের দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। দক্ষ শ্রমিক পাঠানো গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।