পাবনা (ঈশ্বরদী) প্রতিনিধি: চারদিন আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে নিজ শয়নকক্ষে বিছানার ওপর পড়ে থাকা শাকিল প্রমানিক (৩০) নামে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ঘুমের ঔষধ খাওয়ায়ে শোফাসেটের কুশন বালিশ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আপন ভাই ও সহধর্মিণী!
ঈশ্বরদী থানা পুলিশ, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার মূলরহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সাথে জড়িত দুইজন আসামীকে আটক করেছে।আটককৃত আসামীদের দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে রের্কড করা হয়েছে। বুধবার (২ জুন) দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। শুক্রবার (২৮মে) রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার রুপনগর কলেজপাড়া আহসান হাবিবের ভাড়া বাড়ির নিজ শয়নকক্ষে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রোববার (৩০ মে) সকালে নিহত শাকিলের মামা কোরবান মালিথা ঈশ্বরদী থানায় বাঁদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত শাকিল প্রামানিক উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুরের দূবলাচারা গ্রামের ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে। তিনি ঈশ্বরদী বাজারের শাকিল ক্লথ স্টোরের মালিক ছিল।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, , শুক্রবার(২৮ মে) রাত অনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে থানা পুলিশের কাছে খবর আসে ঈশ্বরদী শহরের কলেজপাড়া রূপনগর মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীব এর বাড়ীর ২য় তলার এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুু হয়েছে।পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ,শাকিলের মরদেহ তার ঘরের বিছানার উপরে চিৎ করে পরে এবং তার স্ত্রী মিম খাতুন (২০) শাকিলের মৃতদেহের পার্শ্বে বসে কান্নাকাটি করছে।এসময় মিম পুলিশকে জানান, রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে অচেনা দুইজন ব্যাক্তি বাড়িতে এসে শাকিলকে ডাকাডাকি করছিল। শাকিলের স্ত্রী মিম ঘরের দরজা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অচেনা ২ জন ঘরের মধ্যে ঢুকে মিমকে চর থাপ্পর মারে এবং বুকে লাথি মারিলে মিম অজ্ঞান হয়ে যায়। রাত ৯ টার দিকে জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় মীম, তার হাত,পা মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা এবং ঘরের দরজা বাহির থেকে আটকানো। মিম তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রতিবেশিদের সাহায্য পাবার জন্য ঘন্টাখানেক দুই পা দিয়ে ঘরের দরজা ও ওয়ারড্রপে লাথি মারিয়া শব্দ করতে থাকে। রাত ১০টার দিকে বাড়ীর মালিকের স্ত্রী নাজমা বেগম দুুইতলার শব্দ শুনে শাকিলের দরজার কাছে এসে দেখেন,দরজা বাহির থেকে ছিটকিনি লাগানো রয়েছে। নাজমা বেগম শাকিলের ঘরের দরজার ছিটকিনি খুলে দরজার পার্শ্বে শাকিলের স্ত্রী মিমের হাত,পা মুখ বাঁধা অবস্থায় থাকতে দেখে বাঁধন খুলে দিয়ে প্রতিবেশিদের ডাকেন। শাকিলের ঘরে খাটের বিছানার উপর শাকিলের মৃতদেহ চিৎ অবস্থায় পরে থাকতে দেখে স্থানীয় এলাকাবাসি পুলিশে খবর দেন।শনিবার (২৯ মে) সকালে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী মীমকে থানায় নিয়ে আসে। পরে নিহত শাকিলের ছোট ভাই সাব্বির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।
শাকিলকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম সহ আমরা পুলিশে চৌকশ টিম কাজ শুরু করে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে দুই আসামীকে আটক দেখানো হয়। তিনি আরও জানান,তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত শাকিলের স্ত্রী মিমের সাথে শাকিলের ছোট ভাই সাব্বিরের অবৈধ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া শাকিলের সাথে মা-বাবা-ভাইয়ের জমিজমা ও পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ তৈরী হওয়ার কারণে শাকিল একই বাড়ীতে অবস্থান করলেও আলাদা সংসার শুরু করে। শাকিল তার স্ত্রী মিম ও সাব্বির এর পরকীয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শাকিল- স্ত্রী মিমকে দেবর সাব্বির এর সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দেয়। কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয় যা মিম লুকিয়ে রেখে শুধু মাত্র সাব্বির এর সাথেই গোপনে কথা বলতো এবং প্রায় সময়ে তারা বাড়ী ফাঁকা পেলে ঘনিষ্ট ভাবে মিশতো। এছাড়া কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাকিল ১৯ মে স্ত্রীকে নিয়ে ঈশ্বরদী শহরের কলেজপাড়া রুপনগর মহল্লায় আহসান হাবীব এর বাড়ীর ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে। এতে মিম এবং সাব্বির একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে চলে যাওয়ায় উভয়ই শাকিলের প্রতি মনেমনে ক্ষিপ্ত হয়ে শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাকিলের স্ত্রী মিম বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাত ১০ টার দিকে পানির সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে মিশিয়ে শাকিলকে খাওয়ায়। শুক্রবার ( ২৮ মে) শাকিল সারা দিন ঘরের মধ্যে শুধু ঘুমাতে থাকে। শুক্রবার (২৮ মে) সন্ধ্যার পর শাকিলের ভাড়া বাসায় যাবে তা আগেেই মিমকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল সাব্বির।
শুক্রবার (২৮ মে) সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। শাকিল ঘুমের ঔষধের প্রভাবে তখনো খাটের উপর শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। সাব্বির এবং মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শোফাসেট এর কুশন বালিশ নিয়ে শাকিলের শয়ন কক্ষে ঢুকে শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শাকিলকে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল কোন প্রতিরোধ করিতে পারেনি। অত:পর আসামী মিম ও সাব্বির শাকিলের হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী সাব্বির ওড়না দিয়ে মিম এর দুই পা, শাকিলের পাঞ্চাবী দিয়ে মিম এর দুই হাত এবং মিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মিম এর মুখ বেঁধে বাহির দরজার কাছে রেখে ঘরের দরজাটি বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।এ সময় সাব্বির মিমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় এবং বাসার মেইন গেইটের চাবি বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে মেইন গেইট খুলে বের হয়ে যাওয়ার সময় চাবিটি একবাসা পরে প্রাচীরের দেওয়ালের উপর রেখে দেয়। এই সংক্রান্তে আসামী মিম ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। সাব্বির এর কাছ থেকে মিমের কথা বলার উক্ত গোপন মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।