৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

আটঘরিয়ায় আজিরউদ্দিন হাঁস পালনে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী

শেয়ার করুন:

 

আটঘরিয়া থেকে মাসুদ রানাঃ পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় মৎস্য ভান্ডার ও শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত বিলের খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে আজিরউদ্দিন আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এই সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক বর্তমানে হাঁস পালন শুরু করেছে। তবে প্রাণীসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা পেলে আরো বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব বলেও জানান তারা।

উপজেলা সদর থেকে পশ্চিমে ৪/৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে লক্ষণপুর, ভরতপুর, সঞ্জয়পুর, লক্ষীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন  বিলের দিকে একটু তাকালেই দেখা যাবে বিশাল আকারের বির্স্তীণ মাঠ। উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের এ মাঠে এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক বেকার যুবক তার এ হাঁসের খামার দেখে নিজেরা গড়ে তুলেছে হাঁসের খামার। এদের মধ্যে আজিরউদ্দিন হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার হাঁসের খামারে হাঁসের সংখ্যা সাড়ে চারশত।

সরেজমিনে খামার পরিদর্শন শেষে কথা বলে আজিরউদ্দিন জানান, অভাবের সংসারে আমি অর্থের অভাবে ভালো কিছু করতে পারিনি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে উঠে না।  অনেক ভেবে চিন্তে করে হাঁসের খামার গড়ে তোলার। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না ।

কঠোর পরিশ্রম করে বছর কয়েকের মধ্যে হাঁস পালন করে ব্যাপক লাভবান হয়েছি। এরপর থেকে আমাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এতে থেমে থাকেনি আমার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছে হাঁসের হ্যাচারী। নিজের হ্যাঁচারীতে এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বিলে বা নদীর তীরে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন একটি খরচের প্রয়োজন পড়ে না। অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুন।

খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমান খরচ হয়, খোলা বিলে সে খরচ অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিলের খোলা জায়গায় খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি।

এছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোন ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের উপর পলিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস ২৭০ থেকে ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। নিজের হ্যাঁচারীতে বাঁচ্চা উৎপাদনের কারণে আজিরউদ্দিন হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম।

বর্ষা মৌসুমে তার ৬ মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাঁকি সময় থাকে সে হ্যাচারী নিয়ে। হাঁসের ডিম যখন আকারে ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে গেলে সেই হাঁস বিক্রয় করে দেয়া হয়। তা থেকে লাভ হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। আজিরউদ্দিনের হাঁস পালনের সাফলতা দেখে গ্রামের অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন বিলের বাঁধে হাঁসের খামার। সবাই কম-বেশি লাভবান হচ্ছেন সেই সাথে দুর হচ্ছে এলাকার বেকারত্ব। এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেকার যুবক-যুবতীরা হাঁসের খামার করে স্ববলম্বী হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করা সম্ভব হবে।