প্রবল সমালোচনার মুখে অবশেষে ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ১৮ জুলাইয়ের ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’র অংশ হিসেবে সারাদেশে এক মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে তা ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিলে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ফেসবুকে ঘোষণা দেন—উক্ত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
সমালোচনার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়
ইন্টারনেট বন্ধের ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। কেউ এই উদ্যোগকে “সস্তা চিন্তা” বললেও, কেউ কেউ সরাসরি এই উদ্যোগকে “গণবিরোধী সিদ্ধান্ত” হিসেবে আখ্যা দেন। সাবেক ফেসবুক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়া বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, বাংলাদেশের সংবিধান, টেলিযোগাযোগ আইন এবং সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ—সবকিছুর পরিপন্থী।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই সিদ্ধান্ত একটি ভয়ঙ্কর নজির স্থাপন করতো, যার ফলে ভবিষ্যতের কোনো সরকার অনায়াসে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে পারত।” তার পরিবর্তে এক দিনের জন্য ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দেন সাবহানাজ।
একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “এক মিনিট ইন্টারনেট বন্ধ না রেখে বরং জুলাই মাসে ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়া উচিত ছিল।” আরও একজন লেখেন, “এইসব নাটক না করে বরং দেশের ডিজিটাল উন্নয়ন কীভাবে করা যায়, তা ভাবা উচিত।”
উপদেষ্টার ব্যাখ্যা
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন,
জুলাই কোমেরেশন প্রোগ্রামের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। ‘এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ যে সেরা আইডিয়া না, সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি। পরে ব্যাপক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে—এই কর্মসূচি বাতিল করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কর্মসূচির সংশোধিত স্লাইড ইতোমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। অন্য সব কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রেক্ষাপট: ইন্টারনেট বন্ধের পুরোনো স্মৃতি
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাত থেকে দেশের মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। এই অবরোধ টানা পাঁচ দিন স্থায়ী ছিল, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ছিল ১৩ দিন। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল, এবং সেই আন্দোলন দমনেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।







