২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ 🔻 ১০ই কার্তিক, ১৪৩২🔻 ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

একদিকে এনসিপির সমন্বয় সভা, অন্যদিকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

একদিকে এনসিপির সমন্বয় সভা, অন্যদিকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

শেয়ার করুন:

রাজধানী ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক সমন্বয় সভায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন হলের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের দুজন কর্মীর লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হওয়া এই সংঘাত ছিল ব্যক্তিগত, এটা দলীয় কোনো কারণে নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবু সাঈদ কনভেনশন হলের তৃতীয় তলায় এনসিপি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলার সমন্বয় সভা চলছিল। সভা চলাকালে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দ্বিতীয় তলায় এনসিপির মোহাম্মদপুর থানা ও বংশাল থানার নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ইউসুফ নামে বংশাল থানা এনসিপির এক কর্মীর মাথা ফেটে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকরা ছবি-ভিডিও ধারণ করতে গেলে এনসিপির নেতাকর্মীরা বাধা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস তিনেক আগে বংশাল থানার এনসিপির পদপ্রার্থী ইমতিয়াজসহ কয়েকজন মোহাম্মদপুরে একটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসার বিষয় নিয়ে কথা বলতে যান। সেখানে গিয়ে তারা ঢাকা মহানগর উত্তরের শোয়েব নামে এক নেতাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। শোয়েব রিয়ান নামে মোহাম্মদপুর থানা এনসিপির এক নেতাকে তাদের সাহায্য করতে বলেন। তবে অভিযোগ আছে, রিয়ান বংশাল থানার নেতাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এমনকি বংশালের নেতাদের আটকে রাখারও চেষ্টা করা হয়। তবে তারা কৌশলে পালিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময় রিয়ানের সঙ্গে টাকা ফেরত চেয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় কনভেনশন হলে রিয়ানকে দেখলে বংশালের নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় ইমতিয়াজ টাকার কথা জিজ্ঞাসা করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ সময় রিয়ানের ছোট ভাই ইউসুফকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। এর পরই তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। তবে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চললেও এনসিপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যায়নি।

বংশাল থানা এনসিপির কর্মী সৌরভ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে রিয়ানকে ফোন করে টাকা চাওয়া হলে তিনি বারবার এড়িয়ে যেতেন, ফোন নম্বর ব্লক করে দিতেন। কোনোভাবেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। তাকে কনভেনশন হলে দেখে তার কাছে টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মোহাম্মদপুরের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করেন। এতে ইউসুফ নামে বংশাল থানার এক কর্মীর মাথা ফেটে যায়। এরপর আমরাও ওদের সঙ্গে মারামারিতে জড়াই। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সার্জিস আলমও জানেন।’

তিনি জানান, আহত ইউসুফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার মাথায় তিনটি সেলাই পড়েছে। এ ছাড়া তিনজনের মতো আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, দলটির মোহাম্মদপুর থানার এক নেতা বলেন, ‘তিন মাস আগে ইমতিয়াজসহ বংশাল থানা থেকে কয়েকজন আসেন টাকা-পয়সা সংক্রান্ত একটা ঝামেলা নিয়ে। তারা যাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে, তারাই তাদের আটকে দিতে চেয়েছিল। অথচ এখন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে যে, আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নিয়েছি। ওই ঘটনার পর রিয়ান দুর্ঘটনার কারণে বিছানায় ছিল অনেকদিন। আজকের ঘটনায় রিয়ানসহ তিন-চারজন আহত হয়েছেন। তারা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু কালবেলাকে বলেন, ‘সমন্বয় সভায় মারামারির ঘটনার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটা দুজন কর্মীর পুরোনো ব্যক্তিগত লেনদেন সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিয়ে। দলীয় কোনো কারণে নয়।’



সুত্রঃ কালবেলা