দলের প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ বরাদ্দের দাবিতে অনড় অবস্থানেই রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এতদিন নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়ে আসছিল, বিধিমালায় শাপলা প্রতীক না থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে ইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন প্রতীক তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘শাপলা কলি’। ইসির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এনসিপি। দলটির নেতাদের মতে, বিধিমালায় শাপলার কাছাকাছি প্রতীক যুক্ত হওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এটি তাদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা পূরণ করে না। তারা ‘শাপলা কলি’ নয়, মূল ‘শাপলা’ প্রতীকই চান। ইসি আরও উদারতা দেখাবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শাপলা কলিসহ বেশ কিছু প্রতীক সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৯৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করা হলো। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে শাপলা কলি ছিল না।
এনসিপির নেতারা বলছেন, প্রতীক সংরক্ষণে ইসির কোনো চূড়ান্ত নীতিমালা নেই। কীভাবে শাপলার কলি প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের চাওয়া শাপলা প্রতীক কেন যুক্ত করা হয়নি তার ব্যাখ্যা জানতে চান।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, ‘ইসি শাপলার কলি প্রতীক কোন ক্রাইটেরিয়ায় যুক্ত করেছে, আশা করি সেটি তারা ব্যাখ্যা করবেন। এটি যুক্ত করাকে কিছুটা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি আমরা। একই সঙ্গে আশা করি, তারা আরেকটু উদার হয়ে আমাদের প্রত্যাশিত শাপলা প্রতীকও গেজেটে যুক্ত করবেন।’
একই সুরে কথা বলেছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘প্রতীক তালিকায় নেই, তাই শাপলা দেওয়া যাচ্ছে না এনসিপিকে—এটা ছিল এতদিন ইসির বক্তব্য। তবে ইতিবাচক বিষয় হলো, ইসি সেখান থেকে সরে এসে শাপলার কলিসহ কিছু প্রতীক যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠিত হলো, যে কোনো সময় যে কোনো প্রতীক অন্তর্ভুক্তকরণে কোনো আইনি বাধা নেই। আমরা আশা করছি তারা (ইসি) আমাদের চাওয়া প্রতীক শাপলা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ করবেন।’
শাপলা কলি নয়, দলের প্রতীক হিসেবে শাপলা পাওয়ার দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকার কথা জানান এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা। তিনি বলেন, ‘আমরা শাপলা কলি নয়, শাপলা প্রতীক চাই। ইসি আগে জানিয়েছিল শাপলা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, কিন্তু এখন যেহেতু শাপলা কলি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তারা চাইলে শাপলাও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আমরা কলি নয়, শাপলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প বিবেচনা করছি না।’
তবে, এনসিপির কোনো কোনো নেতা ইসির নতুন এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও জানিয়েছেন। এমনকি ইসি বড় কোনো দলের সঙ্গে শরিক হয়ে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। পূর্ণাঙ্গ কিংবা ফুটন্ত শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি নির্বাচন কমিশনের প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এটি এনসিপিকে ‘বাচ্চা’ বা ‘অনুজ’ হিসেবে বোঝানোর একটি চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন এই নেত্রী।
সামান্তা বলেন, ‘শাপলার কলি দেওয়া গেলে শাপলাও দেওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ফের প্রশ্নবিদ্ধ হলো।’
শাপলা নিয়ে একবিন্দুও ছাড় না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গতকাল রাজধানীর বাংলামটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি, এনসিপি শাপলা চায়। এনসিপি শাপলা নিয়ে নির্বাচন করবে। শাপলার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। শাপলা নিয়ে আমরা একবিন্দু ছাড় দিতে চাই না।’
এনসিপিকে প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ দিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আপনারা তালিকায় শাপলাকে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করে এনসিপির যে অধিকার, তা বুঝিয়ে দিন। …এরই মধ্যে আপনারা আমাদের অনেক দেরি করিয়েছেন, বিএনপি ও জামায়াতকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, জনগণের শক্তিকে চাপা দেওয়ার জন্য, যাতে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসতে পারেন।’
ইসির উদ্দেশে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা আপনাদের বলব, এসব খেলা বন্ধ করেন। যদি এসব খেলা বন্ধ না করতে পারেন, তাহলে হয়তো বা আমরা ইলেকশন কমিশনে গিয়ে, ইলেকশন কমিশনের সামনে গিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদের প্রটেস্টের (আন্দোলন) মাধ্যমে আপনাদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য হবো।’
এদিকে, নমনীয় অবস্থানের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। ইসি বলছে, নানা সমালোচনার মুখে প্রতীকের তালিকা সংশোধন করে শাপলা কলি প্রতীক বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে আবারও সংশোধন করা হবে।
গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘কমিশন মনে করেছে এটা করা যায়, তা-ই করা হয়েছে। যেহেতু কিছু বিরূপ মন্তব্য এসেছে, তাই কিছু বাদ দিয়ে কিছু যোগ করা হয়েছে। কে চেয়েছে বা কে চায়নি, সেটা বিষয় নয়; শাপলা কলি প্রতীকটি যোগ করার সিদ্ধান্ত কমিশনের। ভবিষ্যতে যদি কমিশন প্রয়োজন মনে করে, তাহলে আবারও পরিবর্তন করতে পারবে।’
শাপলা প্রতীকটি বিধিমালায় না থাকায় কোনো দলকে দেওয়া যাবে না, তাহলে কোন বিবেচনায় শাপলা কলি প্রতীকটি বিধিমালায় যোগ করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের প্রতীকের তালিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা ছিল। তাই আগের তালিকা থেকে ১৬টি প্রতীক বাদ দিয়ে ১১৯টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসি মনে করেছে, শাপলা কলি রাখা যেতে পারে। এটা কারও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করার বিষয় নয়। আপনারা জানেন, একটি দল শাপলা চেয়েছে। শাপলা প্রতীক আর শাপলা কলির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’
সুত্রঃ কালবেলা







