পঞ্চমীতে দেবী দূর্গার খাটে ওঠার মধ্যে দিয়ে পূজার আনুষ্ঠিকতা শুরু। অবশ্য মহালয়ার মাধ্যমেই তা শুরু হয়েছে। দেবী দুর্গাকে বলা হয় দুর্গতিনাশিনী। পৃথিবীর মানুষ যখন কোনো অমানুষ বা অসুরের দ্বারা দুর্গতি বা অত্যাচারের শিকার হয়েছে ততবার দেবী দূর্গা আবির্ভূত হয়েছে তাদের ধ্বংস করার জন্য। দেবী দূর্গা নারী শক্তির প্রতীক। করোনা ভাইরাসের জন্য এ বছর দুর্গা পূজার পূর্বেকার মতো সেই জাঁকজমক হবে না। অসুর কে বা কারা? যার মধ্যে সুর নেই অর্থাৎ ন¤্রতা,বিনয় ও মনুষ্যত্ব নেই সেই অসুর। এসব অসুররুপী মানুষগুলো আজ সমাজে বড় বেশী হয়েছে। তাদের দাপটে সুর অর্থাৎ সত্যিকারের মানুষগুলো কোণঠাসা। অসহায় নারীদের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে। নারীর মধ্যেই সেই শক্তি আছে। যা এসব অসুরকে বধ করতে পারে। এমন এক সময়ে মা আসছেন যখন পৃথিবীর শতাব্দির ক্রান্তিকাল চলছে। দ্ব›দ্ব সংঘাত আর মহামারী চলছে। করোনা ভাইরাসে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা লাখ লাখ। প্রতিদিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে একটি কার্যকর টিকা দ্রæত মানুষের মধ্যে দেওয়া যায়। হয়তো এই সুদিন দ্রæতই আসবে। দক্ষিণ ককেশাসে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। উত্তেজনা আরও অনেক দেশেই রয়েছে। নারীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে আমাদের দেশে। ধর্ষণ,গণধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন সব ঘটছে। ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃতুদন্ড করা হয়েছে। তারপরও ধর্ষণ হচ্ছে। মোট কথা আসুরিক শক্তি সমাজে অশুভ ছায়া ফেলছে। এমনি এক সময় দেবী দূর্গার আগমন।
নারী শক্তি যুগে যুগে জাগ্রত হয়েছে। আজও তাই হবে। নারী শক্তি ঠিক জেগে উঠবে। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে দেবী দূর্গা অসুরের সাথে যুদ্ধে রত। মহিষাসুর বধের যে কাহিনী আমরা জানি তাতে মহিষাসর ছিল এক অত্যাচারী অসুর। তার অত্যাচারে স্বর্গ,মর্ত্য পাতাল কম্পিত হয়েছিল। দেবতারা তাদের দেবলোক থেকে বিতাড়িত ছিল। স্বর্গলোক হারিয়ে তারা এসে উপস্থিত হয় ত্রিদেব অথাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ^রের কাছে। তারপর তাদের তেজ থেকে দেবী দূর্গার আবির্ভাব হয়। দেবী দূর্গা হলেন দশভূজা। তিনি দশ হাতে দশ অস্ত্র ধারণ করেন। কারণ মহিষাসুর কোনো পুরুষ দ্বারা বধ করার ছিল না। নারী শক্তিকে অবজ্ঞা করেছিল সেই মহিষাসুরও। তার ফলে তাকেও মরতে হয়েছে। দেবী দূর্গার চরণে তার পতন হয়। আজ আমরা সেই মূর্তিতেই পূজা করি। মহিষাসুর তার পাপের শেষ সীমায় পৌছে গিয়েছিল। তার ধ্বংস অনিবার্য ছিল। কারণ ক্ষমতার অহংকার, নারী শক্তিকে অবহেলা,অত্যাচার এসবই তার পতন তরাণি¦ত করেছিল। পৃথিবীতে যারা অত্যাচারী,লোভ আর ক্রোধান্বিত থাকে তারাও ধ্বংস হয়। কোনো শক্তি আসে তাকে ধ্বংস করতে। প্রতিটি নারী এক একটি শক্তি স্বরুপ। তাদের মধ্যেও সেই বিনাশী শক্তি আছে। যা সব হিং¯্র হায়েনাকে ধ্বংস করতে সক্ষম। যাই হোক সনাতন ধর্মামলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা এই করোনাকালেও মানুষের মুখে একটু হাসি বয়ে আনবে। মনে শক্তি যোগাবে। আর দেবীর কাছে প্রার্থনা থাকবে পৃথিবীকে করোনামুক্ত করে মানুষকে একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে। আর সমাজে নারীর যে অপমান, অবজ্ঞা তার বিরুদ্ধে যেন নারীদের প্রতিবাদের শক্তি যোগায় এবং সমাজকে কুলষমুক্ত করে। দেবীর বিসর্জনের সাথে সাথেই সব অসুরের বিনাশ হোক সমাজ থেকেই।
অলোক আচার্য
সাংবাদিক ও কলাম লেখক, পাবনা








