১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ১৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

পদ্মার ভাঙনে হুমকিতে নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট, আতঙ্কে স্থানীয়রা

শেয়ার করুন:

পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি আর দীর্ঘদিনের অবহেলায় পাবনার নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙনের ফলে ফেরিঘাটটি এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে নদীপাড়ের বাসিন্দারাও হারাতে বসেছেন তাদের বসতভিটা। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেরিঘাটের পূর্ব পাশে, ফেরি পল্টনের নিচ থেকেই বড় বড় পাড় ভেঙে পড়ছে পদ্মায়। মাত্র কয়েক হাত দূর থেকে ভাঙন শুরু হওয়ায় ফেরির মূল প্লাটুনও এখন ঝুঁকিতে। ভাঙনের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফেরিঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতীর ধসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। নদীর কিনার ঘেঁষে রয়েছে স্থানীয়দের বাড়িঘর, যা এখন সরাসরি হুমকির মুখে।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই ভাঙন চলছে, কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। একজন বাসিন্দা বলেন,

“নদীর পশ্চিম পাশে ব্লক দিয়ে পাড় রক্ষা করা হলেও পূর্বপাশে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার যদি ভাঙন থামানো না যায়, তাহলে আমাদের বসতঘর নদীতে চলে যাবে।”

তারা আরও বলেন, তারা কিছু চান না, শুধু নদীর পাড় রক্ষা ব্যবস্থা চাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় নদী শাসন না করা এবং নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার কারণেই এমন দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। ফেরিঘাটের দুই পাশে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে।

নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ পোর্ট অফিসার তোফাজ্জল হোসেন বলেন,

“২০২৩ সালেই চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ঘাটের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও তা দেওয়া হয়নি। জমি না পাওয়ায় ঘাট উন্নয়নে কোনো কাজ করতে পারছি না। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে আমার কোটি টাকার পল্টুনও সরিয়ে নিতে হবে।”

এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বলেন,

“স্থানীয়দের কিছু আপত্তির কারণে বিআইডব্লিউটিএ-কে জমি বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমরা সরেজমিনে ভাঙন পরিদর্শন করেছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট পাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পয়েন্ট। এই ঘাট বিলীন হলে শুধু স্থানীয়রা নয়, সারা অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা আসবে। তাই অবিলম্বে নদীতীর রক্ষা এবং ঘাট এলাকায় স্থায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন—এটাই এখন নদীপাড়ের মানুষের একমাত্র দাবি।