১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

পাবনায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে তালা, ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা

শেয়ার করুন:

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ‘দূর্জয় পাবনা’য় তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। ফুল দিতে গিয়ে তালাবদ্ধ পেয়ে ক্ষুব্ধ হন সাংবাদিকরা। তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা না থাকায় ‘দূর্জয় পাবনা’র তালা খোলা হয়নি।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পনের জন্য রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পদযাত্রা নিয়ে স্মৃতিসৌধের সামনে উপস্থিত হন পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা। এ সময় স্মৃতিসৌধের বাইরে ও ভেতরে চারটি তালা লটকানো ছিল। এ সময় বিম্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকদের দাঁড়িয়ে থাকা দেখতে পেয়ে দূর থেকে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ওয়াজেদ মিয়া ও আরদালী সুজন মিয়া। সাংবাদিকরা গেটের বাইরে পুস্পস্তবক অর্পণ করতে গেলে কিছুক্ষণ পর এক ঝোপা তালার চাবি নিয়ে হাজির হন একজন কর্মচারি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আজ কোন দিবস আছে সেটা তার জানা নেই। আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা আমাকে দেয়া হয়নি। যে কারণে এটার তালা খোলা হয়নি। এখন খুলে দিচ্ছি, আপনারা ফুল দিয়ে যান।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্টাফ ওয়াজেদ আলী জানান, এটা আমাদের চেতনার ব্যাপার। বুকে ও মনে ধারণ-লালন করি। আমি নিজেও ছুটে এসেছি। কিন্তু কর্মচারীদের কেন জানানো হয়নি আর খোলা রাখা হয়নি ব্যাপারটা আমার জানা নেই।’

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, এমন সময় বা এমন দৃশ্য দেখতে হবে এটা মাথায় আসেনি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশকে মেধাশূন্যের উদ্দেশ্যে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। অথচ আমাদের সেই চেতনার আজ এ অবস্থা। তিনি বলেন, আমি মনে করি জেলা প্রশাসনের এটা চরম দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা।

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বিষ্ময় প্রকাশ করে জানান, এটা কেমন কথা। তার মানে জেলা প্রশাসন কি শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ সেটা জানে না, নাকি জেনে পালন করবে না এবং অন্যদের পালনে নিরুৎসাহিত করতে এমনটি করেছে। তীব্র প্রতিবাদ জানালাম এমন কান্ডে।

পাবনা অন্নদা গোবিন্দা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতীন খান জানান, সকাল আটটায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যাই দূর্জয় পাবনা স্মৃতিসৌধে। কিন্তু ভেতরের দরজা তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন কি জন্য তালা দেয়া ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি, ভালোও লাগেনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি লালন ও ধারণকারী একাধিকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ২৪ সালের পর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস একেবারেই তলানীতে গিয়ে আটকে আছে। যে কোন সময় তলানী শূন্য হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে। রোববার শুধুমাত্র পাবনা প্রেসক্লাব, অন্নদা গোবিন্দা পাবলিক লাইব্রেরি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে। এটা চেতনা নয়, এটা আমাদের লজ্জার ব্যাপার।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বিষয়ে তার কিছু বলার নেই। তিনি স্যার (জেলা প্রশাসকের) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। 

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক শাহেদ মোস্তফার সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকজন সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।