১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

পাবনায় শিক্ষকের মাথা ফাটালেন যুবদল নেতা

শেয়ার করুন:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নেওয়াকে কেন্দ্র করে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে এক শিক্ষকের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন যুবদল নেতা ও তার সহযোগীরা। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন কাজী ও তার সহযোগীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বনওয়ারীনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষকের নাম রাজীব বিশ্বাস। তিনি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয় বলে জানান চিকিৎসক।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বনওয়ারীনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। সকালে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গেলে তাদের প্রধান ফটক থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেন শিক্ষকরা। মূলত এটিকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডার জেরে ইট দিয়ে আঘাত করে শিক্ষক রাজীবের মাথা ফাটিয়ে দেন যুবদল নেতা নয়ন ও তার সহযোগীরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের কর্মবিরতি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রাথমিকের শিক্ষকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

সকালে বনওয়ারীনগর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রীতিমতো অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকেই শিক্ষকরা জানিয়ে দেন, আজ ক্লাস-পরীক্ষা হবে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফিরে যায়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় শতাধিক লোকজন ও অভিভাবক বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হাসানকে জানান। এরপর ইউএনওর পরামর্শে শিক্ষার্থীদের আবার বিদ্যালয়ে ডেকে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আশপাশের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওই বিদ্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। কর্মবিরতির মধ্যে কেন পরীক্ষা নেওয়া হলো, তা নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন শিক্ষকরা। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ফোন করে ডেকে আনেন। পরে যুবদল নেতা নয়ন, জবা ও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন। এ নিয়ে নয়ন ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান শিক্ষক রাজীব। তখন তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করলে ফেটে যায়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আহত সহকারী শিক্ষক রাজীব বিশ্বাস বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে সব পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। তা না মেনে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা নিয়েছেন। আমরা বাধা দিলে সন্ত্রাসীদের ডেকে এনে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। আমার মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। অন্য শিক্ষকরা এগিয়ে না এলে আমাকে মেরেই ফেলতো যুবদলের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে যুবদল নেতা নয়ন ও জবাকে চিনতে পেরেছি আমি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন কাজী বলেন, ‘আমরা জানতে পারি সহকারী শিক্ষকরা শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে আটকে রেখেছেন। বিষয়টি দেখতে গেলে সহকারী শিক্ষকরা আমাদের ওপর চড়াও হন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চলমান পরিস্থতি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’

ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিউল আযম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক হিমেল রানা বলেন, ‘যদি ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তাহলে নয়নের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।’