১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ১৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

==বিশে-বিষ ছিল==

শেয়ার করুন:

মোহাম্মদ আবদুল বাছেত (বাচ্চু)ঃ জীবনের অশ্বত্থবৃক্ষ থেকে ঝরে গেল আরেকটি পত্র- পল্লব। আশা- হতাশা, স্বপ্ন- বাস্তবতায় সর্বপরি বাঁচা- মরার টেনশনে পান্ডুর বর্ণে খসে গেল আরেকটি বৎসর জীবন থেকে । ” আমি বেঁচে আছি ” এই হলো বিগত বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন , সবচেয়ে বড় পাওয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জায়গা করে নিবে গত বছরটি তবে এর পরিসমাপ্তি কবে নাগাদ ঘটবে সেটা ঐতিহাসিক ভাবেই নির্ধারিত হবে । আমি আশা করছি আমাদের পৃথিবী আমাদের সন্তানদের জন্য শুভ হোক, নির্বিঘœ হোক । প্রাগৈতিহাসিক থেকে শুরু করে অদ্যবধি জাতি- ধর্ম- বর্ণ – অঞ্চল নির্বিশেষে মানুষ কোনদিনই সামগ্রিক ভাবে একক শত্রুর সামনা সামনি হয়নি এবং পৃথিবীর সকল মানুষ বনাম একটি অদৃশ্য শত্রু এভাবে মুখোমুখি দাড়ায়নি। ক্ষমতাধর ব্যক্তি, রাষ্ট্র , পারমাণবিক অস্ত্র, জীবাণু অস্ত্র, গোলাবারুদ, সব পরাভূত । একটি ভাইরাস , একটি প্রাণঘাতী অদৃশ্য শত্রু “করোনা ” ঈড়ারফ-১৯ . থমকে গেছে পৃথিবী, ভয়ে ত্রস্ত্র তাবত দুনিয়া , মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনীতি , যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, মানুষে মানুষে সম্পর্ক । এত ভালোবাসার মানুষ এত আপন জন কেমন অস্পৃশ্য, অচ্ছ্যুৎ হয়ে যায়! নিরস্ত্র মানুষকে এত ভয় পায় মানুষ ? একমাত্র সন্তান জনক- জননীরে ভয় পায় , অন্যক্ষেত্রেও তাই। রক্তের ঋণ উপেক্ষিত !

ভূপেন হাজারিকার গানটি ” মানুষ মানুষের জন্য” এখন উল্টো সুরে বাজে ” –মানুষ মানুষের কাছে ঘৃণ্য” বর্তমানের নির্মম বাস্তবতা। ইহলোকে যেন কিয়ামত ইয়া নাফসি – ইয়া নাফসি । কুল্লু নাফসি জায়কাতুল মাউত – কিন্তু এখন ¯্রষ্ঠার কাছে মিনতি এমন জঘন্য মৃত্যু দিও না যে আমার প্রিয় মানুষগুলো, আমার সন্তানেরা আমার ছোঁবে না, আমাকে ভয় পাবে। মৃত্যু মানি কিন্তু করোনায় মৃত্যু চাই না- দিয়ো না।
২০২০এর বিষে বিষাক্ত পৃথিবী, বিষে জর্জরিত, কাতর । সারা দুনিয়ায় ঞ২০ খেলে যাচ্ছে করোনা। প্রতিদিন লাশের সহস্র সেঞ্চুরি !
কী ভয়ানক, কী সাংঘাতিক !
এই বিশেই শুনেছি ,করোনা তোমার জন্যও বিষ আসছে । ২০২০এর বিষক্ষয় হোক-২০২১ এ। টীকা তৈয়ার !!
২০-এ আমার বাংলাদেশ–
ধারনাতীত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিল গেল বছরটি । করোনার টেষ্টে রিজেন্ট হসপিটালের সর্বভূক শাহেদ যা করলো তা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করল তাবৎ দুনিয়া। টেস্ট না করেই উল্টো পাল্টা রিপোর্ট! আমাদের অবশ্য ধাতে সয়ে গেছে । বাঙালি বলে কথা । বালিশ কেলেংকারি জিকে শামীমগং গত বছরটিতে বড় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে । ৭০০/=টাকার বালিশ ৭০০০/= টাকায় তা আবার ঐ বালিশ বিছানায় পাতার খরচ ৬০০০/=টাকা । আহ্ কী কন্ট্রাকটরি !
রামায়ণের সীতার বস্ত্র হরণ- এযুগেও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নোয়াখালীতে । শুধু তাতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, ভিডিও করে সোসাল মিডিয়ায় আপলোড দিয়েছে । কার্তিক মাসের কুকুরও লজ্জায় জন্মান্তরে মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়ার আশা ছেড়েছে নোয়াখালির মনূষ্যরুপী অমানুষের রুচি ও চরিত্র দেখে । ওরা কুকুরই থাকতে চায় , কুত্তার বাচ্চা হয়েই জন্ম নিতে চায় – মানুষ নয়।
কেন মানুষ হতে চাইবে? তাহলে তো লেখাপড়া করতে হবে, কলেজ পড়তে হবে । নাহ্ ওরা কলেজে পড়তে চায় না কারণ সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে নববধূ তরুণীকে স্বামীর চাক্ষুসে যা হয়েছে এরপরও কি ওরা মানুষ হতে চাইবে ? না, কুকুরই থাকবে। মানুষ হবে না, কলেজেও পড়বে না। মানুষ হলে তো রাজনৈতিক দলে নাম লেখাতে হবে , ‘ক্যাসিনো’ খেলতে হবে । ২০২০ এ দেখেছে সবাই । টাকার পাহাড়, মদ, নারী । না ওরা এতবড় আয়োজন করতে পারবে না। ২০২০ এ ওরা সিন্ডিকেট মানে বুঝেছে – আলুর সিন্ডিকেট, চালের সিন্ডিকেট, আর পিঁয়াজ তো স্বরচিত ইতিহাস–! হ্যাঁ,
ওরা প্রশান্ত কুমার হালদার হতে চায় না। একটু বাসি- পচা হলেই চলবে। চৌদ্দশত কোটি টাকা একটা মানুষের দরকার হতে পারে, ওদের লাগে না।ওরা যে কুত্তা । তাছাড়া অত টাকা পাচার করার ক্ষমতাও ওদের নেই। ওরা ওসি প্রদীপ কুমার কে চেনে। তাই মানুষ হবে না।
ওদের ইয়াবা ট্যাবলেট দরকার নেই । ওরা নোংরা খাবারই চায় কারণ প্রদীপ তো নোংরাধীক।
কীভাবে একজন জিনিয়াস সাবেক সেনা অফিসার কে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করলো ৩০ জুলাই ২০২০এ!
জাতি হিসেবে ওরা নাকি খুব নিম্নস্তরের নয়। কারণ ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে বাঙালি মানুষ জাতি (কুষ্টিয়া) তার জাতীর পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছে। ওরা দাওয়াত পায় না , দস্তর খানায় খায় না । মারামারি করেই নোংরা হালাল খাবার খায়। ওদের কেউ হেফাজত করে না, অবশ্য প্রাণি জগতে গৃহ কর্তার হেফাজত করার রেকর্ড ওদের আছে । ওদের ধর্ম নাই , ধর্মীয় সমাবেশও নাই তাই ধর্মীয় ¯েøাগানে হুঙ্কার দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ছুঁড়ে ফেলার কথা ভাবতেই পারে না। ওরা ইংরেজ অপশাসন বিরোধী বাঘা যতীনের ম্যুরাল ভাঙতে পারবে না কিছুতেই। এরকম অনেক ঘটনা দেখেশুনে কুকুরেরা কুত্তাই থাকতে চায় , মানুষ হতে চায় না পরজন্মে।

তবু আছি -২০ এর শীর্ষে :
চিন্তাশীলতা বা প্রজ্ঞার প্রাচুর্যতা না থাকলেও আমাদের গুঁয়ার্তুমি আছে যথেষ্ট। স্বাস্থবিধি মানি না , সামাজিক দুরত্ব বুঝি না, ভেন্টিলেশনের অপর্যাপ্ততা , পিপিই ফলস্ তারপরও ৮মার্চ প্রথম রোগী সনাক্ত হবার পর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তে মৃতের সংখ্যা আট হাজার অতিক্রম করেনি। সরকার প্রশাসন সজাগ ছিলেন বলেই। যেখানে উন্নত বিশ্বে প্রতি তিনদিনে করোনায় আক্রান্তের ধারাবাহিক মৃত্যুর সম সংখ্যা। উপর ওয়ালা হেফাজত করছেন, হেফাজতের নেতারা নয় ।
২০২০এর ফেব্রæয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওঈঈ বিশ্বকাপ অনুর্ধ ১৯ চ্যাম্পিয়ান হয়ে গর্বিত হতে পেরেছি ।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরও আমাদের স্বপ্নের “পদ্মা সেতু” ২০২০ এ প্রায় নির্মাণ কাজ শেষ। দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্পন্ন হচ্ছে। মায়ানমারের সামরিক জান্তার হিং¯্র অত্যাচারের শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে মানবিক ব্যবস্থাপনায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত আছে। করোনা থামাতে পারেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পেরেছে। করোনা কালীন সকল খাতের সেবা সমুন্নত রাখতে এবং উৎপাদন- উন্নয়ন সচল রাখতে সদাশয় সরকার গত বছরে তিহাত্তুর হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা দিয়েছেন । ২০২০এ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের – অধ্যাদেশ জারি করে জাতীয় সংসদে বিল অনুমোদিত  হয়েছে। গত বছরেই ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ইতি টানা হয়েছে। জিকে শামীমরা কারান্তরীণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারি স্বাভাবিক বেতনেই আছেন।
গেল ২০২০এ জিডিপি প্রবৃদ্ধির রেকর্ড দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ শীর্ষে ভারত – ৪.৫%,পাকিস্তান – ৫.২%, চীন – ৬.৩%,বাংলাদেশ  – ৮.১%
গত বছরে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করা হয় এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কিন্তু ঈড়ারফ-১৯ ওদের সাথে ঞ২০ খেলতে দেয়নি। নাহলে শেখের বেটি বাউন্ডারি- ছক্কা হাঁকতেন। গত ২০২০অর্থ বছরে সারা দেশে ৫৬০টি আধুনিক মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়ে কাজ শেষ পর্যায়ে। অ¤øমধুর অর্জনে ২০২০। করোনা ভাইরাসের দূর বিপাকে দুর্নীতি প্রতিরোধের দুর্বার গতি শ্লথ হয়েছে। শুরু হবে হয়তো আবার। ২০২০এ আমাদের সন্তানেরা এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি কিন্তু কোন বিকল্প ছিলনা বলেই এমন অনাকাক্ষিত বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হতে হয়েছে।
–জীবন আগে অন্যসব পরে–।
শেষতঃ ২০২০ গল্পে, কবিতায়, সিলেবাসে, ইতিহাসে অংশ হয়ে থাক । আমাদের আগামী দিনে নয় আমাদের সন্তানদের জীবনে তো নয়ই। একুশ আমাদের প্রেরণা, সাহস , শক্তি ও প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত। তাই ২০২১ হবে আমাদের নতুন পৃথিবী।
লেখকঃ মোহাম্মদ আবদুল বাছেত (বাচ্চু)
অধ্যক্ষ,সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ,সুজানগর।