রনি ইমরান, পাবনাঃ অজান্তেই মানুষকে গ্রাস করে ফেলছে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট আসক্তি। মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসছে রোগীরা। উদ্বেগের বিষয় হলো ইন্টারনেট আসক্তদের সংখ্যা ও মানসিক সমস্যার চিত্র ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন, মানসিক বিশেষজ্ঞরা।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০ থেকে ২০ বছরের অপ্রাপ্ত বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এদের বেশিরভাগই ইন্টারনেটে গেইম খেলে কার্টুন দেখে রিলস টিকটক দেখে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ২০ বছরের বেশি বয়সীরা ইন্টারনেটে অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ইউটিউব টিকটক রিলস দেখে সব বয়সীদের মধ্যে আসক্তির সংখ্যাও বাড়ছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার ডাঃ বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ২০ বছরের নিচে ইন্টারনেট আসক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। পাবনা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানসিক সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ শত জন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন ইন্টারনেটে আসক্ত। অনলাইন জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে অনেকে। টিকটক ফেসবুক আসক্তদের মধ্যেও মানিসক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ঘুমাতে গিয়ে অপ্রয়োজনে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে লাইক কমেন্ট ভিউ চেক করতে ব্যস্ত হয় পড়ে। ভাইরাল হওয়ার জন্য অহেতুক টিকটক বানায়। বাছবিচার না করে সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট শেয়ার ভিডিও আপলোড করে মাতামাতি করে। খুব বেশি অস্থির হয় পড়ে ও অজান্তে গুজব ছড়িয়ে দেয়। বিষয়গুলো স্পষ্ট মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে সরকারি ভাবে নীতিমালা সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতাও দরকার বলে জানায় ডাঃ বিপ্লব কুমার সরকার।
ইন্টারনেট আসক্তি মানসিক সমস্যার পাশাপাশি ব্যক্তি ও সামাজ জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। পাবনা সদরের মালিগাছা, মালঞ্চি, হেমায়েতপুর, গয়েশপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় ,অ্যান্ড্রয়েড ফোন হাতে শিশুরা ইন্টারনেটে কার্টুন গেইম রিলস ভিডিও দেখতে ব্যস্ত। তারা পড়াশোনায় অমনোযোগী ও খেলাধুলায় অনুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট আসক্তির বিষয় নিয়ে গয়েশপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর এলাকার গৃহবধু ইশাআরা বানু, কাকলী আক্তার ও বিউটি বেগমের কথা হয়। তারা জানায়, তাদের সন্তানরা ইন্টারনেট ফোনে আসক্ত। ইন্টারনেটে টিকটক ভিডিও, ফেসবুক , গেইম, জুয়া খেলে কাটিয়ে দেয় মূল্যবান সময়। রাত জেগে থাকে, খুব কম ঘুমায়। পড়াশোনা ও সংসারের কাজে ভীষন অমনোযোগী ও খুব হতাশাগ্রস্ত তারা। তাদের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট আসক্তির অভিশাপ থেকে মুক্তি চান তারা। পাবনা শহর থেকে গ্রামগঞ্জের যুবকরা অনেকেই ইন্টারনেটে জুয়াতে আসক্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ভিটে বিক্রয় করছে। সমাজে নিরব ঘাতক হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট জুয়া।
পাবনা অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রারীর মহাসচিব মতীন খান বলেন, ইন্টারনেটে গেমস খেলে শিশুরা বই ও খেলার মাঠ বিমুখ হয়ে পড়ছে। ভাচুর্য়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাছবিচার না করেই মানুষ মানুষের চরিত্র হরণ করে মন্তব্য করছে। দিন দিন মানুষের বিবেক বিশ্লেষনের ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। পারিবারিক অশান্তি কারণ হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন।
পাবনা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ডাঃ দুলাল ভৌমিক বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব যেমন বাড়ছে তেমনি মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ইন্টারনেট আসক্তি অনেক সংখ্যক মানুষকে মানসিক সমস্যায় ভোগাতে পারে। তাই এখনই সচেতন হতে হবে।







