১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

রবীন্দ্র কাচারি বাড়িতে দর্শনার্থীর ওপর হামলা, বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরে অডিটোরিয়াম-লাইব্রেরি ক্ষতিগ্রস্ত

শেয়ার করুন:

শাহজাদপুর প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরুর কাছাড়ি বাড়িতে এক দর্শনার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কাস্টোডিয়ানসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিন শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা কাস্টোডিয়ানসহ নির্যাতনকারী কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভ মিছিলটি শাহজাদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলঅ চত্বরে এসে শেষ হয় । পরে বিক্ষুদ্ধকারীরা রবীন্দ্র কাছাড়ি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। এসময় বিক্ষুব্ধকারীরা কাচারি বাড়ির কাস্টোডিয়ানের অফিসসহ অডিটোরিয়ামে ও লাইব্রেরীতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সেইসাথে অডিটোরিয়াম, বিদ্যুৎ ও বাগান পরিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলামকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে । ঘটনার সময় কাছাড়িবাড়ির কর্মচারীরা জীবন বাচাতে পালিয়ে যায় ।

জানা যায়, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে গত ৮ জুন বিকেলে স্ত্রী সুইটি ও ভাতিজাকে সাথে নিয়ে রবীন্দ্র কাচারি বাড়িতে ঘুরতে যায় মোঃ শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী। এসময় দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য নিয়ে টিকেট দিলেও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য টাকা নিয়েও কোন টোকেন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে কাচারি বাড়ি দর্শন শেষে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের টিকেট দেখতে চায় মেইন গেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারি। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা কোন টিকেট না দেওয়ায় টিকেট দেখাতে ব্যার্থ শাহনেওয়াজের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কাস্টোডিয়ানসহ কাচারি বাড়িতে সব স্টাফ গিয়ে শাহনেওয়াজকে মারধর করে ধরে নিয়ে এসে অফিসের মধ্যে শারিরীক নির্যাতন চালায়। পরে খবর পেয়ে শাহনেওয়াজের অভিভাবক এবং স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় ঐদিন রাতেই একটি লিখিত অভিযোগ দেন কাস্টোডিসহ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার দুইদিন হয়ে গেলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এদিন মঙ্গলবার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুরের সর্বস্তরের ব্যানারে দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা কাছাড়ি বাড়ি অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরীতে ভাঙচুর করে। এবং সেরাজুল নামক এক কর্মচারীকে গুরুতর জখম করে তাকে স্থানীয় পোতাজিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।জনতার হামলার সময় মুহুর্তেই কাছাড়িবাড়িতে ভিতরে থাকা দর্শননার্থীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে । এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মুশফিকুর রহমান।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত শাহনেওয়াজের ভাই সবুজ, হান্নান ও সুমন জানান, প্রবসী শাহনেওয়াজ ছুটিতে দেশে এসে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল কাচারি বাড়ি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র অফিসে আটকে রেখে যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোন স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না। এর সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে তারা আরও বলেন, এই কাস্টোডিয়ান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দর্শনার্থীদের সাথে বাজে আচরণ করেন। প্রতিদিনই কোন না কোন দর্শনার্থীকে অফিসে ডেকে নিয়ে শারিরীক নির্যাতন করেন এবং মোবাইল কেড়ে নেন ।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর কাচারি বাড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা (কাস্টোডিয়ান) হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি গত ৮ জুনের ঘটনা অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করলেও ভাঙচুরের ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য দিতে অসম্মতি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি মোঃ আছলাম আলী জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে রবীন্দ্র কাছাড়িবাড়ি অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরী ভাংচুরের ঘটনায় শাহজাদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা ঝড় বইছে ।