৪ঠা নভেম্বর, ২০২৫ 🔻 ১৯শে কার্তিক, ১৪৩২🔻 ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

রসাটমের ‘প্রেসাইজ এনার্জী’ অলিম্পিয়াড নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ

শেয়ার করুন:

।। এবিএম ফজলুর রহমান।।

রাজশাহী বিভাগের জন্য রসাটমের প্রকৌশল শাখা এতমস্ত্রয় এক্সপোর্ট কর্তৃক আয়োজিত নিয়মিত বার্ষিক বিজ্ঞানভিত্তিক অলিম্পিয়াড ‘প্রেসাইজ এনার্জী’ তে এবছর রেকর্ড সংখ্যক ২,৯৫৮ এর অধিক শিক্ষার্থী। এই অলিম্পিয়াডের মূল লক্ষ্য হলো বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ গড়ে তোলা এবং পারমানবিক শক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিতে তাদের আকৃষ্ট করা। 

অলিম্পিয়াড আয়োজনে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার জাতীয় পরমানু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় মেফি। রাজশাহী বিভাগের পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর এবং রাজশাহী জেলার ৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জুনিয়র এবং সিনিয়র বিভাগে এবারের অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে। জুনিয়র বিভাগ নির্ধারিত ছিল স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য, অন্যদিকে সিনিয়র বিভাগ- কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। প্রতিযোগিতাটি প্রাথমিক এবং চুড়ান্ত- এই দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়।

উভয় পর্বেই শিক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং গনিতের বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এছাড়াও, একটি দলগত প্রতিযোগিতা ছিল, যেখানে তারা ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান করে। চুড়ান্ত পর্বে ছয় শতাধীক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পান। পরীক্ষাপত্র মূল্যায়ন করে মেফি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল।

জুনিয়র বিভাগে প্রথম তিনজনকে পুরষ্কৃত করা হয়, প্রথম স্থান অর্জন করেন সারা ঝাউদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাশরুর স্বচ্ছ।

সিনিয়র বিভাগেও প্রতি গ্রুপ থেকে মোট তিনজন পুরস্কার লাভ করেন। পদার্থবিদ্যায় বিজয়ী হন পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামা জান্নাত এবং রসায়নে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাকিল আহমেদ এবং গনিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন রাজশাহী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মো আখেরুজ্জামান জিম। দলগত ইঞ্জিনিয়ারিং অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টীম ‘রাবিয়ান’।

সম্প্রতি ঈশ্বরদীর এক কম্যুনিটি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের পুরষ্কৃত করা হয়। বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন, এতমস্ত্রয়এক্সপোর্ট এর প্রতিনিধি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেফি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্যানেল।

অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে রূপপুর পরমানু নির্মান সাইটের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “গর্বের বিষয় যে, এতো বিশাল সংখ্যক তরুন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো রূপপুর পরমানু বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভবিষ্যতে যুক্ত হবেন”। তিনি বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান এবং ‘প্রেসাইজ এনার্জী’ আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এতমস্ত্রয়এক্সপোর্টের কম্যুনিকেশন্স বিভাগ প্রধান নিনা দেমেন্তসোভা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীডের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের জন্য এটি অনুপ্রেরণার বিষয় যে প্রতি বছরই অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শিক্ষা ও বিজ্ঞানে রাশিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ এই অলিম্পিয়াড। আমরা আশাকরি, এই অংশগ্রহণকারীরাই একদিন ‘পীসফুল এটম’ এর দূত হিসেবে কাজ করবেন”।

মেফি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবনিন্সক ইন্সটিটিউটের নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এন্ড টেকনোলোজি বিভাগের উপ-প্রধান আলেক্সান্ডার নাখাবভ তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, “অলিম্পিয়াডের যাত্রা শুরুর পর থেকেই অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও মোটিভেশনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করে আসছি। বিজ্ঞান নিয়ে তাদের এই আগ্রহ অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক”।

প্রেসাইজ এনার্জী-২০২৫ এবছর রাশিয়ার পরমানু শিল্পের ৮০বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছিল। 

উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালের ২০ আগস্ট রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) তাদের পরমানু কর্মসূচীর ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এই ক্ষেত্রে রাশিয়া ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সমর্থ হয়। দেশটি ১৯৪৯ সালে তাদের প্রথম পারমানবিক বোমার পরীক্ষা সম্পন্ন করে এবং খুব দ্রুতই ১৯৫৪  সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো অবনিন্সক অঞ্চলে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে। ১৯৫৯ সালে রাশিয়া প্রথমবারের মতো পরমাণু শক্তি চালিত আইসব্রেকার ‘লেনিন’ উদ্বোধন করে।

লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি পাবনা প্রেসক্লাব ও স্টাফ রির্পোটার, সমকাল, পাবনা।