করোনার কারণে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। পুঁজি হারিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী অভিভাবক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে গ্রামে ফিরে গেছেন। ফলে অভিভাবকরা আর্থিক কষ্টে আছেন। এ কারণে স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারছেন না।
রাজধানীর মিরপুরের একটি হাইস্কুলের ২ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০০ শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি জানান, করোনার কারণে অভিভাবকরা ৯ মাস টিউশন ফি দিতে পারেনি।
আর কিন্ডারগার্টেনের চিত্র আরো ভয়াবহ। রাজধানীর একটি কিন্ডারগার্টেনের উদ্যোক্তা সুলতান হোসেন জানান, গত বছর ৫০০ শিক্ষার্থী ছিল। গত বছরের ৯ মাসের টিউশন ফি কেউ দেয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীকে পেয়েছেন, যারা ভর্তিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু ১০ জন শিক্ষার্থী দিয়ে চলবে না। যদিও আগেই শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে চলে গেছেন। প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—জানালেন এই কিন্ডারগার্টেনের মালিক।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে প্লে-শ্রেণিতে গতবার ১০০ শিক্ষার্থী পেয়েছি। এবার পেয়েছি মাত্র তিন জন। আর পুরোনো শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশও আসছে না।’ তিনি জানান, দেশের প্রায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অবস্থা শোচনীয়। বকেয়া টাকা দেওয়ার ভয়ে আসছে না কেউ। আর স্কুল না খোলার কারণেও স্কুলে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ। স্কুল খুলে দিলে আগের মতো না হলেও শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ স্কুলে ফিরবে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ভয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করছে। অনেক অভিভাবক মনে করেন ভবিষ্যতে আমার সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তির চিন্তা ছিল। তাই করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরে বসিয়ে না রেখে তাকে মাদরাসায় ভর্তি করে দিয়েছি। অনেক কিন্ডারগার্টেন ও বে-সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুল বন্ধ থাকা কালিন সময়ে শিক্ষার্থীরা মাদরাসার দিকে ঝুকছে। অনেকের ধারণা যত বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকবে, ততই বেশি শিক্ষার্থী ধর্মীও শিক্ষার দিকে ঝুকবে। বিমুখ হয়ে পড়বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে।








