৭ই নভেম্বর, ২০২৫ 🔻 ২২শে কার্তিক, ১৪৩২🔻 ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

সাঁথিয়ায় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ক্যানালে সূতি জালের বাঁধ আমন ধান পানির নীচে, রবি ফসলের আবাদ ব্যাহত হবার সম্ভাবনা

শেয়ার করুন:

আবুল কাশেম, পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাগেশ্বরী-ডি-২ ক্যানাল “ কৈটলা পাম্প হাউজ হতে মুক্তার ধর ” পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার ক্যানালের প্রায় ১০টি স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সূতি জালের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে ক্যানালে সূতি জালের বাঁধ দেওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। জমিতে পানি থাকায় পাকা ও আধা পাকা আমন ধান পানির নিচে। চলতি রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, শরিষার আবাদ ব্যাহত হওয়ায় সম্ভাবনা। বাঁধ অপসারণ চেয়ে এলাকার কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ। বেড়া পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ হামিদ জানান, পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে সুতিজালের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের জন্য কাউকে লীজ দেয়া হয়নি।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়,বেড়ার কৈটোলা পাম্প হাউজ হতে মুক্তর ধর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিস্কাশনের প্রায় ৩০ কিলোমিটার ক্যানাল রয়েছে। এ ক্যানাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়ার প্রায় ১৫টি বিলের পানি নিস্কাশন হয়। ঐসব ক্যানালে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরার জন্য প্রায় ৫টি স্থানে সূতি জালের সামগ্রিক প্রস্তুতি নেওয়াসহ ১টি স্থানে অবৈধ সুতি জালের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এতে সাঁথিয়া বেড়া উপজেলার সব ক’টি বিলের (মুক্তর ধর, সোনাই বিল, ঘুঘুদহ বিল, জামাই দহ, বড় গ্রাম বিল, খোলসা খালি বিল, কাটিয়াদহ বিল, গাঙ ভাঙ্গার বিল ,টেংড়া গাড়ীর বিল) পানি বের হতে না পারায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে নিচে নষ্ট হওর্য়া আশংকা করছে কৃষকেরা।
অন্য দিকে সময় মত পানি বের না হওয়ায় পেঁয়াজের বীজ তলা তৈরি করতে পারছে না এলাকার কৃষকেরা। প্রতি বছর পানি নিস্কাশন ধীর গতি হওয়ায় কাদা মাটির উপর বীজ তলা তৈরি করা হত। এবার কাদা মাটিতে বীজ তলা তৈরির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও ব্যস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিল পারে বীজ তলা তৈরির জন্য কৃষকদের সংগ্রহ করা হাজার হাজার বস্তা ছাই পড়ে রয়েছে। পানি কমলেই তৈরি করবে বীজ তলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ ক্যানালের বিভিন্ন অংশে সুফলভোগী মৎস্যজীবিরা লীজ নিয়ে মাছের অভয়ারণ্য করে থাকেন। মৎস্য অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে লীজকে পুজি করে প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় সুফলভোগীরা সূতি জালের অবৈধ বাঁধ নির্মান করেন। যা প্রতি বছরই কৃষকের গলার কাটা হয়ে দেখা দেয়।
কাশিনাথপুর ইউপির দোয়ারগাড়ী বিলে গিয়ে দেখা যায় কোমর পানির উপরে অর্ধ পাকা ধান পড়ে আছে। কোথাও কোথাও কৃষকরা হাঁটু পানিতে পেঁয়াজের বীজ তলা তৈরি করার জন্য জমি থেকে ময়লা পরিস্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শামুকজানী বাজারের দক্ষিনে, দত্তপাড়া গ্রামের পশ্চিমে, বড়গ্রাম , তালপট্টি নামক স্থানে ব্রীজের পুর্বে ও পশ্চিমের সৈয়দপুরের মৌজা , পুন্ডুরিয়া ব্রিজের পাশসহ প্রায় ৫টি স্থানে সুতি জাল স্থাপনের প্রস্তুতি চলছ্।ে তালাই,পলিথিন,বাঁশ দিয়ে এইসব সুতিজালের বাধ দেয়ার ফলে কচুরিপানা আটকে পানি প্রবাহে বাধা সুষ্টি হচ্ছে।
এদিকে যারা সুতি জালের বাধ দিয়ে মাছ শিকার করছে তারা বলেন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লীজ নিয়ে সুতি জালের বাঁধ তৈরি করেছি।
আফড়া গ্রামের কৃষক রইজ উদ্দিন খাঁ জানান, আমার ধান পেকে গেলেও পানির কারণে কাটতে পারছি না। কবে বীজতলা তৈরি করবো আর কবেই বা জমিতে রবি শস্য বপন করবো। উপজেলার প্রতিটি বিলেই একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
সৈয়দপুর গ্রামের মোস্তফা প্রামানিক জানান, মাছের অভয়ারণ্যের জন্য লীজ নিয়ে এসময় আমরা সূতি জাল দিয়ে বাঁধ তৈরি করে মাছ শিকার করি। তবে সূতি জালের জন্য লীজ নেওয়া হয়নি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান জানান, আমরা এই সোতি জালের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করি। জাল কেটে দিয়ে আসি এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করি। তারা জানায় তিন দিনের মধ্যে সকল বাশ অপসারণ করে নেবে। তারা যদি সেটা না করে তাহলে আমরা আবার ব্যবস্থা নিবো।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এই সোঁতি জালের কারনে পানি নামতে সময় লাগবে যার প্রভাব কৃষকদের ফসলের উপর পরবে। তাই এই সোঁতি অতি জরুরী ভিত্তিতে অপসারণ করা দারকার।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না বলেন, গত দিনে এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল, তারা সময় চেয়েছে। অতিদ্রুত তারা নিজেরা অপসারণ না করলে মৎস্য অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন একসাথে অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে।#