১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ 🔻 ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২🔻 ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭

সাঁথিয়ায় মতিন হত্যা, পক্ষে বিপক্ষে নানা গুঞ্জন

শেয়ার করুন:

সাঁথিয়া (পাবনা)সংবাদদাতাঃ সাঁথিয়া উপজেলাধীন নাগডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদের চাচাতো  ভাই আঃ মতিন (৫৫)কে গত ৪ জুন (শনিবার রাতে) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় চেয়ারম্যানের আপন ভাই জুয়েল রানা(৩৫)আহত হয়।

এঘটনায় রবিাবর সকালে সাবেক চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ বাদী হয়ে ১৮জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নাগডেমরা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজকে প্রধান আসামী করা হয়। ওই দিনই চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজকে আটক করে থানা পুলিশ। বর্তমান চেয়ারম্যানকে আটকের পর থেকেই চলছে এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। পক্ষে বিপক্ষে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। তবে অধিকাংশ মানুষ ও হাফিজের পরিবারের সদস্যরা চায় তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক তথ্য ঊৎঘাটন করে আসল দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। নাম প্রকাশ না করার সর্তে নাগড়েমরার বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য আ: সালাম, আ: কদ্দুস জানান, হাফিজ একজন ভালো ছেলে। সে জনগণের ভোটে নৌকার বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে।  এতে নৌকার প্রার্থী হারুন হিংসাত্বক ভাবে তাকে হয়রানী করছে।
হাফিজ চেয়ারম্যানের স্ত্রী মিতু খাতুন বলেন, তার স্বামীকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রতিপক্ষরা মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন এ হত্যাকান্ড প্রতিপক্ষ একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান  হারুণ-অর রশিদ ও তার ভাই জুয়েল পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়ে। রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে তার স্বামীকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান হাফিজের বৃদ্ধ বাবা ইউনুস আলী মোল্লা বলেন, আমার ছেলে একজন হাফেজ। ধর্মীয় সামাজিক শিক্ষা ছাড়া তাকে হত্যার শিক্ষা দেয়া হয়নি। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই এবং ষড়যন্ত্রের মামলার সঠিক তদন্ত চাই।
এদিকে নাগডেমরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ জানান, হাফিজুর রহমান আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। দীর্ঘ দিন সে আমার আমার কর্মীদের উপর অত্যাচার করে আসছিল। আমার চাচাতো ভাইকে সে ও তার লোকজন হত্যা করেছে।
নিহত আ: মতিনের স্ত্রী আজিরন (৫০) জানান, আমার কোন ছেলে সন্ত্রান নেই। আমার স্বামীই এ সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিল। আমার চারটি মেয়ে রয়েছে। ভাঙ্গা করে কি ভাবে আমার সংসার চলবে। তিনি তার স্বামী হত্যার বিচার চান। তিনি আরও বলেন ঘটনার দিন রাতে তার স্বামীকে জুয়েল রানা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দাওয়াত খেতে। পরে তার মৃত্যুর খবর পাই।
 জুয়েল রানা বলেন,ফেঁচুয়ান গ্রামে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে ছোট পুুটিপাড়া নদীর ডাইকে এলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আমার উপর হামলা চালায়। এসময় চাচাতো ভাই মতিন আমাকে বাঁচাতে এলে তাকে উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। আমি আত্মরক্ষায় দৌঁড়িয়ে ইছামতি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচি।
এদিকে শনিবার রাতে আঃ মতিন ও জুয়েল রানা যে নৌকায় ইছামতি নদী পার হন সেই নৌকায় থাকা অপর দুইজন মৎস্যশিকারী ছিলেন। এ প্রতিবেদক তাদের কাছে ওই রাতের ঘটনা জানতে চাইলে তারা জানান, নৌকা পার হয়ে নদীর ডাইক দিয়ে অপর অপরিচিত দুইজন হাটতে থাকে। আমরা টেঁটা ও টর্স দিয়ে মাছ শিকার করতে থাকি। ১০/১৫ মিনিট পরে আমরা একজন ব্যক্তির বাঁচাও আমাকে বাঁচাও শব্দ শুনতে পারি। পরে জুয়েল নামের ছেলেটিকে নদীর কচুরির উপরে থাকতে দেখি। সে তার চেয়ারম্যান ভাই হারুনকে সংবাদ দিতে বলে। পরে অল্প সময়ের মধ্যে তার ভাই লোকজন নিয়ে জুয়েলকে উদ্ধার করে। তার কিছুক্ষন পর আমরা মতিনের লাশ দেখতে পাই। তারা আরও জানান, ঘটনার সময় তাদের থেকে আমাদের দুরত্ব ৭/৮ শত গজ হবে। এর মেেধ্য আমরা এ ডাইকে বা নীর পথে কাউ কে আসতে দেখি নাই। এমন কি অন্য ব্যক্তিদের উপস্থিতি টের পাওয় যায়নি।
এলাকাবাসী ও সুধী সমাজ জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে নাগডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ গ্রæপের সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান গ্রæপের দ্ব›দ্ব চলছিলো। এ দ্ব›েদ্বর মধ্যেই সাবেক চেয়ারম্যানের আত্বীয় খুন হয়। বিষয়টি রহস্যময়। তারা সঠিক তদন্তের মধ্যে দিয়ে এ হত্যা কান্ডের সঠিক তথ্য উন্মোচনের দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।
অপর দিকে হত্যা কান্ডের পর থেকেই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। প্রশাসন লুটপাট ঠেঁকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মামলার প্রধান আসামী বর্তমান চেয়ারম্যানসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকয় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।