মনসুর আলম খোকন, সাঁথিয়াঃ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া গ্রামে এক সময় শোভা পেত জমিদারবাড়ির বিশাল বিশাল সুরম্য, দৃষ্টিনন্দন অট্রালিকাসমূহ। কালের গর্ভে সব হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন জমিদারবাড়ির অধিকাংশ জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। অপরদিকে অযতœ,অবহেলা পরিচর্যার অভাবে দালানগুলোর ইট ধীরে ধীরে খসে পড়তে পড়তে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তিন শত বছর আগের জমিদার বাড়িটির শেষ চিহ্ন বহন করে রয়েছে ভগ্ন প্রাচীন মন্দিরটি । এটিও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভেঙেচুরে লতাপাতায় ছেয়ে গেছে। স্থানীয়দের আশংকা,বর্তমানে জমিদার বাড়িটির শেষ চিহ্নটুকুও হারানোর দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ ১০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত এ বাড়িটির অবশিষ্ট বিদ্যমান অংশটুকু পুনরায় সংস্কার করলে ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির স্বৃতিটুকু ধরে রাখা যেত বলে মনে করছেন এলাকাবাসি।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩ শত বছর আগে ভারত থেকে নবকুমার নামে এক জমিদার এসে সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করে ১৫৪টি তৌজি নিয়ে তার জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার নবকুমার রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে পার্বতীচরণ রায় ৬০ বছর এখানে জমিদারি পরিচালনা করেন। জমিদার নবকুমার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা না গেলেও তার ছেলে পার্বতীচরণ রায় সম্বন্ধে অনেককিছুই জানা যায়, তিনি ভারতের কাশীতে বিয়ে করেন। বিবাহিতজীবনে চার পুত্রসন্তানের জনক ছিলেন তিনি। পুত্ররা হলেন হেমন্ত রায়, রামাচরণ রায়, শ্যামাচরণ রায় এবং বামাচরণ রায়। বাবা পার্বতীচরণ রায় মারা যাওয়ার পর তিন পুত্র ভারতে চলে গেলেও এক পুত্র শ্যামা চরণ রায় সাঁথিয়ায় থেকে যান। শ্যামাচরণ রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে দীপক কুমার রায় জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে দীপক কুমার রায় জমিদার বাড়িটি বিক্রয় করার ঘোষণা দিলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের সন্ধ্যারানী বাড়িটি ক্রয় করেন। বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দারা অর্থাভাবে সংস্কার করে জমিদার বাড়ির চিহ্নটুকু টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। ক্ষেতুপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, এ জমিদার বংশের অন্যতম প্রাণপুরুষ শ্যামাচরণ রায় একজন বিদ্যানুরাগী,দানবীর ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি বর্তমান সাঁথিয়া উপজেলা সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সাঁথিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে জায়গা দানসহ অনেক সেবামূলক কাজ করে গেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ৩ শত বছর আগের জমিদার বাড়ির দশ শতাংশ জমির উপর ভাঙাচোরা পলেস্তরা খসা শিবমন্দিরের গম্বুজ। আছে চার বিঘা জমির উপর একটি পুকুর। পুকুরের সান বাঁধানো ঘাট অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বাড়িটির প্রাচীরও নেই। গোয়ালবাড়ি গ্রামের ধীপেন্দ্রনাথ দেবনাথ বলেন, বাড়িটির মূল প্রবেশদ্বারের মুখে ছিল বাঘÑসিংহের পাথরের মূর্তি। সেই প্রবেশদ্বারের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একতলা দুইতলা বিশিষ্ট বিশাল অট্রালিকার কিছু ইট ছাড়া বর্তমানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে এই জমিদারের ইতিহাস দুই একজন প্রবীণ ব্যক্তিছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটাই অজানা। ক্ষেতুপাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যাক্তি আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মোল্লা জানান, আমরা ছোট্র বেলায় দেখছি, এই জমিদার বাড়িতে একতলাÑদুতলার বিশাল কয়েকটি দালান ও পাকাবাধা পুকুরও আছিল। বাড়ির চারদিকে আছিল পাচির। এখনতো কিছুই নাই। আছে খালি মন্দিরের ভাঙ্গাচোরা মঠ। তবে আমি মনে করি মন্দিরের ভাঙ্গাচোরা মট টাকেও যদি ঠিকঠাক করে রাখা হয় তাহলে এই জমিদার বাড়ির স্বৃতিটুকু থাকত।
এ ব্যাপারে জমিদার বাড়িতে বর্তমানে বসবাসরত অরুন তালুকদার বলেন, অনুদান চেয়ে বহুবার অনেকের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। সরকারি অনুদান পেলে মন্দিরটি পুনরায় মেরামত করে জমিদার বাড়ির চিহ্নটুক রাখা যেত এবং সেখানে আমাদের ধর্মীয় পুজা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারতাম।








